পটুয়াখালীতে গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে স্থানীয়রা

সড়কের বেহাল দশায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ। ছবি: স্টার

দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কারের অভাব ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে পটুয়াখালীর গ্রামীণ সড়কের এখন বেহাল দশা। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী এসব সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) হিসাব অনুযায়ী, জেলায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ১১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যোগাযোগ সচল রাখতে স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে সড়কটি মেরামত শুরু করেছেন।

পটুয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ থেকে বড় বিঘাই ইউনিয়নের তিতকাটা পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কটি গত কয়েক বছর ধরেই সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী। তার ওপর সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে এ সড়কটির কয়েকটি স্থান বিধ্বস্ত হলে তা আরও নাজুক হয়ে পড়ে। সড়কটির কুড়ালিয়া, কাজির হাট, হরতকিবাড়িয়া, বাশঁতলা, খাটাশিয়া এলাকায় কয়েকটি গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব এলাকার লোকজন উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াত করছেন। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন কালিকাপুর, মাদারবুনিয়া, ছোটবিঘাই ও বড় বিঘাইর অর্ধ লক্ষাধিক লোক এ সড়কটি ব্যবহার করে উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন।

ছোট বিঘাই ইউনিয়নের হরতকিবাড়িয়া গ্রামের মোশারেফ ফকির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সড়কটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও কয়েক বছর ধরে মেরামত না করায় এটি দিয়ে আমরা বহু কষ্টে যাতায়াত করি। সড়কটির অনেক জায়গায় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্ষাকালে গর্তে পানি ঢুকে তা কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে।’

গ্রামের আরেক বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, এমনিতেই সড়কটির বেহাল দশা। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কয়েকটি স্থান ধসে গেছে। ফলে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। উপজেলা কিংবা জেলা শহরে যাতায়াতের এটিই একমাত্র পথ এবং অনেক সময় অসুস্থদের নিয়ে এ পথ দিয়েই হাসপাতালে যেতে হয়।

এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানে অফিসের হাট ব্রিজের দক্ষিণ পাশ দিয়ে সড়কটি ধসে যায় এবং এলাকার প্রায় দুই শতাধিক হেক্টর কৃষি জমি লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন গ্রামবাসী সড়কটির ধসে যাওয়া অংশটি নিজেদের উদ্যোগে মেরামত করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আলম খান বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্যে আমন ধানের বীজ বপন করতে হবে। তাই কৃষি জমি রক্ষা এবং আমন আবাদের লক্ষ্যে আমরা নিজেরাই সড়কটির ভাঙা অংশ মেরামত শুরু করেছি।’

ছোট বিঘাই এলাকার একটি ইটভাটার মালিক শহীদ গাজী বলেন, ‘রাস্তা খারাপ থাকার কারণে পরিবহন করতে না পারায় আমার ইটভাটায় পোড়ানো ১৫ লক্ষাধিক টাকার ইট বিক্রি করতে পারিনি। অনেক লোকসান হয়েছে।’

কর্তৃপক্ষ এলাকার লোকজনদের কথা বিবেচনা করে সড়কটি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী যুগল কৃষ্ণ মন্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পটুয়াখালী জেলায় পাঁচ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও ২৫ কিলোমিটার আংশিকসহ মোট ৩০ কিলোমিটার কাঁচা গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।’

‘এ ছাড়াও, ২৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক সম্পূর্ণ ও ৫৭ কিলোমিটার আংশিকসহ মোট ৮৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ অংকে ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। একইসঙ্গে ৮০টি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা’, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক ও ব্রিজ মেরামত করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Protests, road blockades trigger traffic disruptions in Dhaka

Several parts of the capital have been experiencing severe traffic congestion today due to demonstrations and road blockades by different political parties citing various reason

1h ago