করোনা মোকাবিলায় কেরালার প্রশংসা অমর্ত্য সেন, নোয়াম চমস্কির
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় কেরালার প্রশংসা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং প্রখ্যাত দার্শনিক ও লেখক নোয়াম চমস্কি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, শুক্রবার কেরালা সরকারের উদ্যোগে অনলাইনে ‘কেরালা ডায়লগ’ আলোচনায় করোনা মোকাবিলায় কেরালার ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশংসা করেন আলোচকরা।
আলোচনায় নোয়াম চমস্কি জানান, কেরালা কোভিড -১৯ মহামারিতে যেভাবে সাড়া দিয়েছে তা পুরো বিশ্বকে অবাক করেছে।
তিনি বলেন, ‘ভারতের বাকি অংশ এমনকি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই সংকটে যেভাবে প্রতিক্রিয়া করেছে তাদের সঙ্গে কেরালার পার্থক্য বেশ চমকপ্রদ। কেরালার মতো করে খুব বেশি অঞ্চল কাজ করেনি। এই মহামারি খুব দ্রুতই আমাদের কাছে বিশ্বে যে অস্বাভাবিক বৈষম্য তা তুলে ধরেছে।’
মহামারি শেষে বিশ্বের কোনো মৌলিক পরিবর্তন হবে কিনা জানতে চাইলে চমস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো এখনো প্রচলিত ব্যবস্থাই রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বরং আরও একনায়কতন্ত্র, বিধিনিষেধ ও জনগণের ওপর নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছে।
‘তবে, এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকে সমন্বয় করা গেলে বিশাল শক্তিতে পরিণত হতে পারে। তারা পরিবর্তন আনতে পারে এবং তারা সবাই একটি নতুন বিশ্ব তৈরির চেষ্টা করছে,’ বলেন তিনি।
চমস্কি জানান, ভিয়েতনামও এই মহামারি মোকাবিলা সফলভাবে করেছে। সেখানে কোভিডে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি কোনো লকডাউন ছাড়াই মহামারিকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
‘অন্যান্য দেশ- তাইওয়ান, হংকং এবং নিউজিল্যান্ডও এই রোগটি মোকাবিলা করেছে। ইউরোপের মধ্যে জার্মানি এই রোগের বিস্তারকে ভালোভাবে ঠেকাতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাণিজ্যিক হাসপাতাল ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি জার্মানি।’
চমস্কি জানান, কিউবা, যারা ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার, তাদের চিকিৎসকরাই সহায়তার জন্য ইতালিতে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই মহামারি বিশ্বের অস্বাভাবিক বৈষম্য তুলে ধরেছে। সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা। স্পেন ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা কৃষ্ণাঙ্গ ও তাদের উত্তরসূরী সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।’
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ওই আলোচনায় বলেন, আমলাতন্ত্র ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের বাইরে মহামারি মোকাবিলায় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে কেরালা।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কোভিড মোকাবিলা কেরালার জন্য একটি আন্দোলন হয়ে উঠবে যার মাধ্যমে পরিবর্তন আসবে।’
কেরালার জনস্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা ও সাক্ষরতার উচ্চহারের প্রশংসা করেছেন অমর্ত্য সেন। মহামারির কারণে ইউরোপে যে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়েছে কেরালায় তা হয়নি বলে জানান তিনি।
‘ভারতে অপরিকল্পিত ও কাঠামোবিহীন লকডাউন অনেকের দুর্দশা ও কষ্টের কারণ হয়েছিল। সরকারের উচিত ছিল নাগরিক সমাজের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা। সরকার একধরনের কর্তৃত্বমূলক পদ্ধতিতে লকডাউন বাস্তবায়ন করে। এটি দিনমজুর ও শ্রমিকদের জন্য একটি বিপর্যয় ডেকে এনেছে।’
ওই আলোচনায় আরও অংশ নিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান। তিনি জানান, যেসব দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা গ্রহণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে তারাই মহামারি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিল।
কেরালায় ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানান, উন্নয়নের ব্যাপারে নতুনভাবে পরিকল্পনা করতে শুরু করছে কেরালা।
বিজয়ন বলেন, ‘নতুন ধারণা ও টেকসই উন্নয়নের মডেল গ্রহণ করতে “কেরালা ডায়ালগ” নামে ওয়েবমিনার শুরু হয়েছে।’
Comments