টিউশন ফির চাপে বিপর্যস্ত অভিভাবক, অর্থ সংকটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

প্রতীকি ছবি। স্টার ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন কিংবা চাকরি থাকলেও অনেকের বেতন কাটা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন খরচ মেটানোই যেখানে কঠিন হয়ে পরছে সেখানে বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সন্তানদের টিউশন ফি। বিদ্যালয় থেকে জরুরি ভিত্তিতে টিউশন ফি প্রদানের জন্য অভিভাবকদের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে।

বিদ্যালয়গুলো বলেছে, তাদের তহবিলে খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন দিতে তাদের অর্থের প্রয়োজন।

অভিভাবকরা অবশ্য বলছেন, মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেয়। তাই, মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের দাবি করা এপ্রিল, মে এবং জুনের পুরো টিউশন ফি ‘যৌক্তিক’ না।

এ বিষয়ে অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের মধ্যে বাড়ছে উত্তেজনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি তহবিল সরবরাহ করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বেশ কয়েকজন অভিভাবক দাবি করেন মার্চ মাস থেকে শুরু করে কমপক্ষে ছয় মাসের টিউশন ফি মওকুফ করতে হবে।

অনেকেই বলেছেন, তাদের আয় কমে যাওয়ায় পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে পরছে। আবার অনেকের জিজ্ঞাসা, কয়েক মাস ধরে নিয়মিত ক্লাস না হওয়ার পরও তারা কেন বেতন দেবেন?

তাদের একজনের দুটি সন্তান পড়ে রাজধানীর মগবাজারের একটি নামী বিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল মাধ্যমে টিউশন ফি প্রদান করতে বলে এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে।

টিউশন ফি মওকুফের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা চলতি মাসের প্রথম দিক থেকে ফেসবুকে অনলাইনে ক্লাস চালু করেছে। আর আমাদের টিউশন ফি দিতে বলছে মার্চ মাস থেকে। এটা হাস্যকর বিষয়।’

আরেকজন অভিভাবকের সন্তান নারায়ণগঞ্জের উত্তর চাষাড়ার একটি বিদ্যালয়ে পড়ে। তার কথাও প্রায় একই রকম। ‘অনলাইন ক্লাস মে মাসের শেষের দিকে শুরু হয়েছে। কিন্তু, তারা এপ্রিল, মে এবং জুন মাসের টিউশন ফি দাবি করছে।’

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিএসএইচই) পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, অনলাইনে ক্লাস না নেওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি চাইছে, এমন কোনো অভিযোগ তাদের কাছে নেই।

রাজধানীর মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানিয়েছেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করার জন্য কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি বলেন, ‘একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে রেকর্ডকৃত ক্লাস সম্প্রচারিত হচ্ছে। তারপরও তারা আমাদের বলছে টিউশন ফি দিতে।’

যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন জানান, তারা সকল গ্রেডের জন্য ক্লাস চালু করেছেন, যা টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে। ‘রোটেশন পদ্ধতিতে ক্লাশগুলো প্রচারিত হচ্ছে। হতে পারে কিছু অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী কিছু ক্লাস মিস করেছেন।’

তিনি বলেন, তহবিল সংকটের কারণে শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না এবং অভিভাবকদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফি পরিশোধ করার আহ্বান জানান।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার মতো রিজার্ভ তহবিল তাদের নেই।

শিক্ষকরা বলেন, শহরের হাতে গোনা কয়েকটি বিদ্যালয় আছে যেগুলো এখনও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে তাদের রিজার্ভ থেকে বেতন দিতে পারছে।

অভিভাবকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর নামীদামী স্কুলগুলোর মধ্যে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ফি আদায় করছে।

সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হামিদা আলী এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌগিয়া বলেন, তাদের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য তাদের টিউশন ফি প্রয়োজন। দুজনেই বলেন যে বিদ্যালয়ের খরচ মেটাতে তাদের আয়ের একমাত্র উত্স টিউশন ফি।

ইষ্ট ওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং ডিপিএস এসপিডি (দিল্লি স্কুল)-এর মতো ইংলিশ মিডিয়াম বিদ্যালয়গুলোও ফি সংগ্রহ করছে।

মাস্টারমাইন্ড জুন মাসের টিউশন ফিসহ বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করেছে। তাদের একটি নোটিশে বলা হয়েছে যে বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অভিভাবকরা এপ্রিল, মে এবং জুনের টিউশন ফির অর্ধেক জমা দিতে পারবেন।

অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত টিউশন ফি মওকুফ করার দাবি জানিয়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যে সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৮০ শতাংশ অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন বা হারাতে চলেছেন। তারা তাদের পরিবার ও বাড়ির খরচ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে টিউশন ফি প্রদান করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’

গতকাল শনিবার রাজধানীতে একটি অনলাইন সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, বিদ্যালয় এবং অভিভাবক উভয়কেই মানবিকভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিস্তিতে ফি নিতে এবং সম্ভব হলে টিউশন ফি ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানান। অভিভাবকদের তিনি অনুরোধ করেন সম্ভব হলে যেন ফি পরিশোধ করেন যাতে করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো রা, তারা ঋণ চাইতে পারে। আমরা এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করতে পারি।’

জানতে চাইলে ডিএসএইচই পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তাদের এখনও নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে Levying Tuition Fees: Parents struggle, but schools can’t help it

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago