দ্বিতীয় দিনের মতো বারডেমে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
চাকরি স্থায়ীকরণ ও সব চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতিসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের অস্থায়ী চিকিৎসকরা।
আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে তারা এই কর্মসূচি শুরু করেন। যা দুপুর ২টা পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে কর্মসূচিতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘আজ দ্বিতীয় দিনের মতো আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের কাজে ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু, আমাদের দাবির ব্যাপারে কিছু বলেননি তারা। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচিতে অনড় থাকব।’
তাদের দাবিগুলো হলো— বৈষম্যমূলক আরএমও পোস্ট বাতিল করে সকল অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত চিকিৎসকদের (আরএমও, এমও এবং সহকারী রেজিস্ট্রার) চাকরি স্থায়ী করতে হবে; সকল চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত ও চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়ভার বারডেমকে নিতে হবে; কর্তব্যরত চিকিৎসকদের এবং তাদের পরিবারের জন্য কোভিড টেস্ট এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে; রোগী ভর্তির পূর্বেই করোনা টেস্টের মাধ্যমে কোভিড/নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা লিখিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং বারডেমে কর্তব্যরত থাকাকালীন কোনো চিকিৎসকের করোনায় মৃত্যু হলে এককালীন ১০ লাখ টাকা প্রণোদনা দিতে হবে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. কাউয়ুম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ট্রেইনি চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছে। তারা বলছে, তাদের স্থায়ী চিকিৎসক করে ফেলতে। কিন্তু, আমরা কীভাবে তাদের স্থায়ী করব? চুক্তির ভিত্তিতে চিকিৎসায় ট্রেনিংয়ের জন্য তাদের নির্বাচিত করে ট্রেনিংয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে এবং তাদের একটা সম্মানি দেওয়া হয়। করোনার মধ্যে এখন তারা একটা সুবিধা আদায় করতে চাচ্ছে।’
‘আমাদের আড়াই হাজারের মতো স্থায়ী লোক আছে। এটার তো একটা পদ্ধতি আছে। আমাদের শূন্য পদে বিজ্ঞাপন হবে, সেখানে আবেদন করতে হয়। এরপর ইন্টারভিউ বোর্ড আছে, বিজ্ঞদের পরামর্শ আসবে, তারপর নিয়োগ হয়। তারাই তো ট্রেনিং শেষ করে আমাদের এখানে আসতে পারে। কিন্তু, তারা যেটা চাচ্ছে, বেআইনিভাবে আমরা তো সেটা করতে পারি না’, বলেন তিনি।
পিপিই নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সেটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। ‘আসলে মূল দাবিটা জোরদার করার জন্য তারা অন্যান্য বিষয়গুলো আনছে। এখন আমরা তাদের বলে দিয়েছি, তাদের স্থায়ী করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।’, বলেন ডা. কাউয়ুম চৌধুরী।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যারা কর্মবিরতি পালন করছেন, তারা বারডেমে ট্রেইনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। তারা তো এখানে চাকরি করছেন না। ট্রেনিং পিরিয়ডে তাদের একটা সম্মানি দেওয়া হচ্ছে। ট্রেনিং শেষে তারা চলে যাবে। সবাইকে তো বারডেমে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে, হ্যাঁ কাউকে নেওয়া হলে তখন তো তারাই অগ্রাধিকার পাবে।’
কর্মসূচিতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদেরকে ট্রেইনি চিকিৎসক বলা হচ্ছে। কিন্তু, চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেইভাবে বেতন পাচ্ছি এবং বেতনের ওপর করও দিচ্ছি। তা ঠিক এখন আমাদের ট্রেনিং চলছে। মানে পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য আমাদের ট্রেনিংটা গণ্য হয়। কিন্তু, আমরা ট্রেইনি না। ট্রেইনি বলে যুগের পর যুগ তারা চিকিৎসকদের বঞ্চিত করছে। তাদের সার্ভিস রুলের আওতায় আমাদের আনা হচ্ছে না। অথচ আমরা বেতন থেকে কিন্তু বারডেমের নামে করও দিচ্ছি।’
এর আগে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে তারা এই কর্মসূচি শুরু করেন। যা দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে। গতকাল কর্মসূচিতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বারডেমের মহাপরিচালকসহ কর্তৃপক্ষের কাছে এসব দাবি তিন মাস আগে থেকেই করে আসছি। কিন্তু, তারা এসবে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তবুও আমরা রোগীদের সেবা দিতে পিছপা হইনি। আমাদেরকে যেসব পিপিই দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ধুয়ে তিন থেকে চার বার করে ব্যবহার করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের ১৫-২০ জন চিকিৎসক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ বারডেম কর্তৃপক্ষ কাউকে চিকিৎসা পর্যন্ত দিচ্ছে না।’
‘তাদের কয়েকজন বলছে, তারা আমাদেরকে এগুলো দিতে পারবে না। তাদের ইনকাম নেই, টাকা নেই। আমাদেরকেই বারডেম দেখতে হবে। এরপরও আমরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি। (অস্থায়ী) যারা জীবন-ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, অন্তত তাদের চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়ার কথাও আমরা তাদের বলেছি। কিন্তু, তারা এসব মানতে নারাজ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দিনকে দিন ঝুঁকি আরও বাড়ছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল কাউন্সিলসহ বেশ কয়েকটি মিটিং হয়েছে। কিন্তু, কোথাও আমাদের দাবিগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। আমরা কয়েকবার তাদের আল্টিমেটাম দেই। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি গ্রাহ্য করছে না। এই অবস্থায় আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করছি’, বলেন তিনি।
চিকিৎসকদের এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস’ সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর)। সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘তাদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে আমরা এফডিএসআর একাত্মতা ঘোষণা করেছি।’
আরও পড়ুন:
Comments