‘বর্ষায় হামাকগুলাক বানের পানিত ডুবা নাগে’

তিস্তাপাড়ের কৃষক বদিয়ার রহমান। ছবি: এস দিলীপ রায়

‘তিস্তা নদীত এ্যাকনা পানি বাড়লেই হামার বাড়ী-ঘরোত পানি ওঠে, তাতে হামার দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়, হামার কষ্ট বেড়ে যায়। বর্ষায় হামাকগুলাক বানের পানিত ডুবা নাগে,’ দ্য ডেইলি স্টারের কাছে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটরে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের কৃষক বদিয়ার রহমান (৫৭)।

তিনি আরও বলেন, ‘উজান থাকি পানি আসিয়া তিস্তার পানি বাড়ে আর হামার ফসলাদি যা আছে সবকিছু তল করি ফেলায়। হামরা বাড়িত থাকির পাং না। ছওয়া পোয়া, গরু-ছাগ, হাঁস- মুরগি নিয়া যাওয়া নাগে সরকারি রাস্তা, বাঁধ ও উচুঁ জাগাত।’

এক তিস্তা নদী বিভক্ত হয়ে তিন-চার ভাগে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে চরের ও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজনকে বেশ ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তিস্তা যদি একটি শাখায় প্রবাহিত হতো তাহলে বন্যার পানিতে তাদেরকে কম কাবু হতে হতো বলে জানান একই চরের কৃষক সহিদার রহমাস (৬৮)।

তিনি বলেন, ‘অল্প এ্যাকনা পানি বাড়লে তিস্তা উচলি যায় আর হামাকগুলাক ভাসি নিয়া যায়। হামরাগুলা তিস্তাপাড়ে নিদারুণ কষ্ট নিয়া বাস করবার নাগছি।’

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদীর দুর্গম চর সিন্দুর্নার কৃষক নজির আলী (৬৫) জানান, তিস্তা নদীর বুক আর মুলভূখন্ডের জমি প্রায় সমান্তরাল হয়ে গেছে। তিস্তায় একটু পানি বাড়লে তীর উপচে প্লাবিত করে। বাড়ি-ঘরে পানি ওঠে এক বুক, এক গলা পর্যন্ত। বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদে চলে যেতে হয়।

নজির আলী বলেন, ‘তিস্তা নদীটা যদি খুড়িয়া একটা চ্যানেলে নেইল হয় তাক হইলে হামরাগুলা এতো বেশি বানের পানিত হাবুডুবু খাইলোং না হয়। শুকনা কালে তিস্তার বুকোত শুধু চর আর চর। মাইলের পর মাইল হামাক জাটা নাগে আর বর্ষা আসলে হামাকগুলাক বানের পানিত ডুবা নাগে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর কালমাটি এলাকার বানভাসি রাহেলা বেওয়া (৬৩) জানান, বর্ষা এলে তাদের কয়েক দফায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে সরকারি রাস্তা, বাঁধে ও উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিতে হয়। এ সময় তাদের নিদারুণ কষ্টে থাকতে হয়। খেয়ে-না খেয়ে বাঁচতে হয়। এভাবে বছরের পর বছর বেঁচে আছেন তারা। আয়-রোজগার করে কিছু টাকা জমালেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর মেরামত করতে তা শেষ হয়ে যায়। তারা কখনোই দারিদ্রতার দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছেন না।

‘হামার দু:খ কাইও দ্যাখে না। হামারগুলার কষ্ট নিদারুণ। দুবেলা অন্নও ঠিকমতো হামার জোটে না,’ বলেন তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরল আমিন বলেন, ‘তিস্তার বুক বালুতে ভর্তি হয়ে পুরু হয়ে উঠেছে আর এ কারণে একটু পানি বাড়লে তিস্তাপাড়ে দেখা দেয় বন্যা পরিস্থিতির। তিস্তা খনন করে একটি চ্যানেলে প্রবাহিত করলে তিস্তাপাড়ে তেমন কোনো বন্যা পরিস্থিতি ও ভাঙন দেখা যাবে না। এতে রক্ষা পাবে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষ।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বলেন, ‘বছরের পর বছর পলি জমে তিস্তার বুক উঁচু হয়ে উঠেছে। অনেকটা মুলভূখন্ডের সমান্তরাল হয়েছে। তিস্তায় খনন ব্যবস্থা না থাকায় তিস্তা নদী একই গর্ভে তিন-চারটি চ্যানেলে প্রবাহিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর বর্ষাকালে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রায় দেড় লাখের বেশি টন বালু এসে তিস্তার বুকে জমাট থাকে। তিস্তা খনন করে একটি চ্যানেলে প্রবাহিত করা বিশাল বাজেটের ব্যাপার। এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার।’

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

2h ago