মৌলভীবাজারে হোম আইসোলেশনেই সুস্থ হচ্ছেন বেশিরভাগ করোনা রোগী
![মৌলভীবাজার মৌলভীবাজার](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/moulavibazar_2.jpg?itok=PmFNgKlc×tamp=1681732800)
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ঘাগটিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন স্বাস্থ্য কর্মী এ কে এম জাবের (৩২)। সম্প্রতি তিনি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বাড়িতেই আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর আমি প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার আদা চা এবং গরম পানি পান করেছি। সেই সঙ্গে নিয়মিত ওষুধ ও ফলমূল খেয়েছি।’
বাড়িতে থেকেই সুস্থ হওয়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের লঘাটি গ্রামের করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যাংক কর্মকর্তা সাদেক হোসেন (৩০) বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমি মোটেও ভয় পাইনি। বরং মনোবল শক্ত রেখেছি। হোম আইসোলেশনে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছি। প্রতিদিনই গরম পানি দিয়ে অন্তত পাঁচবার গড়গড়া করতাম, ভাপ নিতাম এবং পান করতাম। রং চাও খেয়েছি। তেমন কোনো ওষুধ খাইনি। প্রচুর ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল খেয়েছি। আল্লাহর রহমতে এখন সুস্থ আছি। আক্রান্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ২০ মে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে ২৩ মে ফলাফল আসে ‘পজিটিভ’। ২৮ দিন বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পর গত ১৮ জুন বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে করোনা মুক্ত বলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজারে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদেও মধ্যে বেশিরভাগই হোম আইসোলেশনে ছিলেন। আজ সোমবার পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন পর্যায়ে করোনা ‘পজিটিভ’ ৫৫৭ জন। এর মধ্যে বাড়িতে থেকে আরোগ্যলাভের ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৫৫ জন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় গত ৪ এপ্রিল প্রথম করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যবসায়ী মারা যান। পরে তার নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা ‘পজিটিভ’ ধরা পড়ে। এরপর কমলগঞ্জ উপজেলায় একজন চা শ্রমিক মারা যান। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে জেলার সবগুলো উপজেলাতেই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এদের মধ্যে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।
জেলার মোট ৫৫৭ জন করোনা রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৮২ জন। এর মধ্যে বাড়িতে থেকে সুস্থ হয়েছেন ২৫৫ জন এবং হাসপাতাল থেকে ২৭ জন। বাকী রোগীদের মধ্যে বর্তমানে হোম আইসোলেশনে আছেন ২৪৭ জন, হাসপাতালে ২২ জন এবং মারা গেছেন ছয় জন।
মৌলভীবাজারে করোনার উপসর্গ দেখে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষায় করোনা ‘পজিটিভ’ শনাক্ত হওয়ার পর রোগীদের নিজ বাড়িতে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাদের হোম আইসোলেশনেই চিকিৎসা চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাঠকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে রোগীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছেন।
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। আজ পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলায় ১০৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৪ জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বাড়িতে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের প্রায় শতভাগ মানুষ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। আমরা সবসময় ফোনে রোগীদের ফলোআপ করছি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন তউহীদ আহমেদ বলেন, ‘জেলায় সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন হাসপাতালে সুস্থ হয়েছেন। বাকিরা বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়েছেন। প্রতিটি উপজেলায় করোনা কন্ট্রোল কমিটি আছে। তারাই সরাসরি আক্রান্তদের তত্ত্বাবধান করছেন। প্রথমে সরকারি নিয়ম ছিল দুবার নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলেই সুস্থ বলা হতো। এখন রোগীর উপসর্গ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আরও অনেকেই প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে রোগীও বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের সংখ্যা।’
Comments