করোনা-ঘূর্ণিঝড়-নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত উপকূলের জেলেদের জীবন

মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত আর মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা— এসবের কারণে মহাবিপাকে পড়েছেন উপকূল, বিশেষ করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী জেলেরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব জেলেরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের অনেকেই ধার-দেনা করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করে পরিবারে চাহিদার যোগান দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। ফলে মাছ শিকারের ট্রলার এখন ঘাটেই ভেড়ানো রয়েছে। ছবি: স্টার

মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত আর মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা— এসবের কারণে মহাবিপাকে পড়েছেন উপকূল, বিশেষ করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী জেলেরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব জেলেরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের অনেকেই ধার-দেনা করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করে পরিবারে চাহিদার যোগান দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে দেশে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসরে প্রাদুর্ভাব। নানাবিধ সরকারি নির্দেশনার কারণে অন্যান্য পেশার লোকদের মতো উপকূলের জেলেরাও  ক্ষতিগ্রস্ত। স্বাস্থ্যবিধিতে কড়াকড়ির কারণে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারেননি। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আঘাত সেই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়িয়েছে। সবশেষ ২০ মে থেকে শুরু হয়েছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম নিশ্চিতকল্পে গভীর সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকারের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। নিষেধাজ্ঞার কারণে সমুদ্রে মাছ শিকার করতে পারছেন না জেলেরা। সব মিলিয়ে দীর্ঘ সময় এসব জেলেরা কর্মহীন থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন গঙ্গামতি এলাকার জেলে আবু বকর (৪৫)। বাপ-দাদার পেশা সাগরে মাছ শিকার করা। ছোটবেলা থেকে অন্যকোনো কাজ না জানায় তিনিও একই পেশায় এসেছেন। কিন্তু, করোনা আর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে এখন রয়েছেন মহাসংকটে।

‘কী করব? ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে কোনোরকমে চলছি। অন্য কোনো কাজ জানি না। আর করার মতো কোনো কাজও নাই’, বলেন আবু বকর।

একই এলাকার আরেক জেলে হানিফ মিয়া (৪০) বলেন, ‘আমার জীবনে এরকম দুর্যোগ আর দেখিনি। একদিকে করোনা, আরেকদিকে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নিষেধাজ্ঞা। ঘরে খাবার নাই। এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ারও সুযোগ নাই। ছয় জনের সংসার নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। মাঝেমধ্যে কুয়াকাটায় সবজি বিক্রি করি। তাও পুঁজি নাই।’

লতাচাপলী এলাকার জেলে বসির উদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে দেওয়া লকডাউনে মাছ শিকার করতে পারিনি। তারপরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানেও আমরা নিঃস্ব। এরপর শুরু হয়েছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সবমিলিয়ে আমরা মহাবিপদে। সরকারের কাছ থেকে যে সহযোগিতা পাই, তা খুবই নগণ্য। এ পর্যন্ত মাত্র ৪৬ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।’

মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার কারণে বেকার হয়ে পড়া জেলেদেরকে দুই কিস্তিতে মোট ৯২ কেজি চাল খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা। এর মধ্যে প্রথম কিস্তির ৪৬ কেজি চাল জুন মাসের শেষ দিকে বিতরণ করা হলেও শেষ কিস্তি এখনও পৌঁছায়নি।

আলীপুর মৎস্য বন্দরের ব্যবসায় ও লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আনসার উদ্দিন মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জেলেরা এখন বেকার। পরিবার নিয়ে তারা এখন মহাবিপাকে। বরাদ্দ স্বল্পতায় সরকারের দেওয়া প্রণোদনাও সবাইকে দেওয়া যায়না। নিবন্ধিত সকল জেলেদেরকে প্রণোদনার আওতায় আনা জরুরি।’

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ উপজেলায় ১৮ হাজার ৩০৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। যাদের প্রায় ৯০ ভাগই সমুদ্রে মাছ শিকার করেন। করোনার প্রাদুর্ভাব, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডব আর সর্বশেষ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা সত্যিই দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।’

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Public Administration Ministry's Logo

2 deputy commissioners among 3 transferred ahead of polls

The Ministry of Public Administration today announced transfers of at least three government officials, including two deputy commissioners, ahead of the upcoming national parliamentary election

2h ago