ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা-ধরলার ৩৫টি পয়েন্টে ভাঙন, ৭৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে

‘নদ-নদীত পন বাইল্লে বান হয় আর হামরাগুলা বানোত ভাসি যাই। বানের পানি কইমলে দ্যাখা দ্যায় ভাঙ্গন। হামার ভিটামাটি, ফসলের জমি, বাগান সোককছিুই ভাঙ্গি চলি যায় নদ-নদীন প্যাটোত। হামারগুলার কষ্টের শ্যাষ নাই’— এভাবে নিজের কষ্টের কথা বর্ণনা করছিলেন কুড়িগ্রামের কৃষক নাদের ইসলাম।
Erosion_Lalmonirhat.jpg
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র। ছবি: সংগৃহীত

‘নদ-নদীত পন বাইল্লে বান হয় আর হামরাগুলা বানোত ভাসি যাই। বানের পানি কইমলে দ্যাখা দ্যায় ভাঙ্গন। হামার ভিটামাটি, ফসলের জমি, বাগান সোককছিুই ভাঙ্গি চলি যায় নদ-নদীন প্যাটোত। হামারগুলার কষ্টের শ্যাষ নাই’— এভাবে নিজের কষ্টের কথা বর্ণনা করছিলেন কুড়িগ্রামের কৃষক নাদের ইসলাম।

তার বাড়ি রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর এলাকায়। বন্যার পানি নামেত শুরু করার তিন দিনে তার ১০৯ শতাংশ জমি চলে গেছে ব্রহ্মপুত্রের পেটে। ১০ শতাংশ জমিতে ছিল নাদের ইসলামের ঘর। বাকি তিন বিঘা আবাদি জমি। এখন পরিবারের চার সদস্য নিয়ে তিনি সরকারি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।

নিঃস্ব হয়ে গেছেন একই গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান। তিনি বলেন, ‘হামরাগুলা অ্যালা কোনটে যাং। বান আইসলে ভাসি আর বান গ্যাইলে হামার ভিটামাটি চলি যায় নদের মধ্যে।’

গ্রামের আকলিমা বেগম মনে করেন, ‘ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন তীব্র হওয়ার মূল কারণ হলো ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদের বুকে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে পানির প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তীরে আঘাত করছে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও প্রশাসনের নীরবতায় বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।’

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত চার দিনে তার ইউনিয়নের প্রায় ৬০টি বাড়ি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে চলে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি, ফলের বাগান ও বাঁশঝাড়। ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার আবেদন দেওয়া হলেও কোনো ফল আসেনি।’

আকলিমা বেগমের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই বিপদ।’

Erosion_Lalmonirhat1.jpg
লালমনিরহাটের সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামের এক কৃষক নদী ভাঙনে সব হারিয়ে ফেলেছেন। ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুন্ডায় বাড়ি কৃষক আবদার আলীর। তিস্তার ভাঙনে তিনি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আবদার আলী বলেন, ‘মোর ভিটামাটি গ্যাইছে, আবাদি জমি গ্যাইছে। একটা বাঁশেরঝাড় আছিলো সেটাও গ্যাইছে। অ্যালা মোর কিছুই নাই, মুই নিঃস্ব, ভূমিহীন।’

আবদার আলীও মনে করেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদী আগ্রাসী হয়ে উঠেছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বর্তমানে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলাপাড়ে ৩৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত চার দিনে ৭৫০ বসতভিটাসহ কয়েক বিঘা আবাদি জমি, ফলের বাগান ও বাঁশেরঝাড় নদীগর্ভে চলে গেছে। দুই জেলায় নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় এসব এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন ঠেকাতে কয়েকটি জায়গায় কাজ চলছে।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago