কোটি টাকার স্লুইস গেট, কৃষকের ভোগান্তি
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরে কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা স্লুইস গেটটি এখন আর কৃষকের কাজে আসছে না।
প্রায় আট বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তৈরি করা স্লুইস গেটটির কারণে এখন ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকরা।
মহিপুর ইউনিয়নের তিন শতাধিক কৃষকের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কলাপাড়া পাউবো কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থ বছরে ইমার্জেন্সি সাইক্লোন রিকভারি অ্যান্ড রিস্টোরেশন প্রজেক্টের অর্থায়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সঙ্গে এক কোটি টাকা খরচে স্লুইস গেটটি তৈরি করা হয়। এই গেট দিয়ে গ্রামে আটকে পড়া পানি আন্ধারমানিক নদীতে নেমে যেত।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের জলোচ্ছ্বাস ও মেরামতের অভাবে বাঁধটি ভেঙে গেলে পাউবো নতুন করে নিজামপুর এলাকায় আরেকটি বাঁধ তৈরি করে। তখন স্লুইস গেটটি বাঁধের বাইরে পড়ে যায়। এখন এটি আর কৃষকের কাজে আসছে না।
সম্প্রতি নিজামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধের ভিতরের ফসলি জমি বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। পানি সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
নিজামপুর গ্রামের কৃষক কুদ্দুস শরীফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি এ বছর আমন চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছিলাম। গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে বীজতলা ডুবে গেছে।’
কুদ্দুস শরীফের মতো গ্রামের অন্যান্য কৃষক— সিদ্দিক মুন্সী, সিরাজুল ইসলাম, নুরদারাজ খলিফা, মোস্তফা মল্লিক, আলমগীর শরীফ ও নুর ইসলাম বেপারীদের একই ভোগান্তি। তারা জানান, অন্তত তিন শতাধিক কৃষক এই স্লুইস গেটের কারণে সমস্যায় পড়েছেন।
তারা আরও জানান, আমন রক্ষায় বাঁধ তৈরি করা হলেও স্লুইস গেটটি বাঁধের বাইরে থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও তাদের অভিযোগ, বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুটের স্লোপে বালুর বস্তা না দেওয়ায় জোয়ারের ঢেউ ও মৌসুমি জলোচ্ছ্বাসে ওই অংশটি যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে।
ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বনি আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মহিপুর এলাকার প্রায় এক হাজার হেক্টর আমন চাষের জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এখন বীজতলা তৈরি করার সময়। বীজতলা তৈরির ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চারা রোপন করতে হয়। কৃষকদের এ দুরাবস্থা দূর করতে ওই গ্রামে পাউবোর একটি স্লুইজগেট নির্মাণ করা দরকার।’
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পটুয়াখালী জেলা আমন উৎপাদনে দেশে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আমন আবাদে কৃষকদের সহায়তায় ক্ষেতের জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি অপসারণের বিকল্প নেই।’
‘যাচাই-বছাই করেই নিজামপুর গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সঙ্গে স্লুইস গেটটি তৈরি করা হয়েছিল,’ উল্লেখ করে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ওই গ্রামটি নদী তীরবর্তী হওয়ায় বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের সঙ্গে স্লুইস গেটটিও ভেঙে গেছে। এটি এভাবে ভেঙে যাবে, তা আগে থেকে বোঝার উপায় ছিল না।’
‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আবার ওই গ্রামে একটি স্লুইস গেট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে,’ যোগ করেন তিনি।
Comments