প্রবাস

কেমন ছিল যুগোস্লাভিয়ার দিনগুলো?

আজকের প্রজন্মের অনেকে হয়তো ‘যুগোস্লাভিয়া’ নামটি সেভাবে শুনেনি। তবে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল এটি।
স্লোভেনিয়ায় একটি মোটরগাড়ি কোম্পানির আর্টিফিসিয়ার ইয়োজে নালের সঙ্গে লেখক।

আজকের প্রজন্মের অনেকে হয়তো ‘যুগোস্লাভিয়া’ নামটি সেভাবে শুনেনি। তবে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল এটি।

ইউরোপ তো বটেই এমনকী বিশ্ব রাজনীতিতে ‘যুগোস্লাভিয়া’ ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্র। এখন এই শব্দটি অনেকটাই মুছে গিয়েছে মানুষের মন থেকে। আজ যুগোস্লাভিয়া শুধু ইতিহাস।

মূলত যুগোস্লাভিয়া ছিল ছয়টি ভিন্ন রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি ফেডারেশন। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সার্বিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া ও মন্টিনিগ্রো মিলে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন গঠিত হয়। প্রথমদিকে, এ ফেডারেশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধ চলাকালে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যসহ অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য, গ্রিস ও বুলগেরিয়ার আক্রমণ থেকে এ দেশগুলোকে রক্ষা করা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সার্বিয়ার দখল করা আলবেনীয় অংশটি ‘কসোভো’ নামে বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিতি লাভ করে। কসোভো সে সময় সার্বিয়ার অংশ ছিল।

যুগোস্লাভিয়ার শাসনব্যবস্থা ছিল অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমনিভাবে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত এবং প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব সরকার রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের প্রত্যেকের নিজ নিজ সরকার ছিল।

ফেডারেশনের প্রত্যেক সরকার আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখতো। তবে শর্ত ছিল কোনো আইন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রণয়ন করা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না।

যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের রাজধানী ছিল বেলগ্রেডে। এখন এটি সার্বিয়ার রাজধানী। ইউরোপের অন্যতম প্রধান দুইটি নদী দানিয়ুব ও সাভার সঙ্গমস্থল ছিল বেলগ্রেড। বেলগ্রেড ছিল সে সময় পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে প্রধান সেতুবন্ধনকারী নগরী।

এ কারণে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যসহ ইউরোপের সব সাম্রাজ্যের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল বেলগ্রেড।

বেলগ্রেড ছিল তৎকালীন ইউরোপের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরীর একটি। শহরটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছিল। আয়তন ও জনসংখ্যার বিবেচনায় শহরটি ছিল যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের সবচেয়ে বড় শহর।

অন্যদিকে লুবলিয়ানা, জাগরেব, স্কোপিয়ে, পোডগোরিছা, সারায়েভো শহরগুলো তখনও সেভাবে গড়ে উঠেনি। যদিও অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে এদের অনেকে প্রাদেশিক রাজধানীর ভূমিকা পালন করেছে।

যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের রাষ্ট্রভাষা ছিল সার্বো-ক্রোয়েশিয়ান। সার্বিয়ান ও ক্রোয়েশিয়ান এ দুইটি ভাষা সম্মিলিতভাবে সার্বো-ক্রোয়েশিয়ান নামে পরিচিত। তবে স্লোভেনিয়ান, বসনিয়ান, মন্টিনিগ্রিন, আলবেনিয়ান, মেসিডোনিয়ান ভাষারও প্রচলন ছিল যুগোস্লাভিয়ায়।

সার্বিয়ান, ক্রোয়েশিয়ান, স্লোভেনিয়ান, মন্টিনিগ্রিন, বসনিয়ান, মেসিডোনিয়ান এ ছয়টি ভাষা দক্ষিণ স্লাভিক ভাষা হিসেবে পরিচিত। এ ছয়টি ভাষাই অনেকটা কাছাকাছি ধাঁচের।

সাংবিধানিকভাবে যুগোস্লাভিয়া ছিল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও বরাবর সেটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবমুক্ত।

বলাবাহুল্য যুগোস্লাভিয়ার সমাজতান্ত্রিক কাঠামো সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো তেমন রক্ষণশীল ছিল না। যুগোশ্লাভিয়া সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও মুক্তবাজার অর্থনীতিকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, কানাডাসহ পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে সখ্যতা ছিল। এ সব দেশ ভ্রমণে যুগোশ্লাভিয়ার নাগরিকদের কোনো বিধি-নিষেধ ছিল না।

অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার পরও পশ্চিমের দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রতি তারা যেমন উদার ছিল, অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আদর্শিকভাবে তারা মিশে থাকতে পেরেছিল। যদিও মার্শাল টিটো যুগোস্লাভিয়ার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে স্ট্যালিনের প্রভাব থেকে অনেকখানি দূরে রেখেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে যুগোস্লাভিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল বাজার অর্থনীতি ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এ দুইয়ের মাঝামাঝি।

রাজনৈতিকভাবে পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে বিভাজন টানা হয় নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বিদ্যমান সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে।

গ্রিস ভৌগোলিকভাবে পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত হলেও গ্রিসকে খুব একটা পূর্ব ইউরোপীয় দেশ বলা হয় না। কেননা, দেশটিতে কোনো সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা কমিউনিজমভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার কোনো প্রভাব ছিল না।

আলিয়োসা, বর্তমানে বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিনি স্লোভেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভা গোরিছার অধিবাসী। তিনি ছিলেন একজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজার। কেমন ছিলও যুগোস্লাভিয়ার দিনগুলো? তিনি জানান, যেহেতু যুগোস্লাভিয়া ছিল সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে গড়ে উঠা রাষ্ট্র তাই সে সময় যাবতীয় সম্পদ ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন।

বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে সে সময় কোনো কিছু ছিল না। তবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি বাড়ি ও একটি গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হতো। পাশপাশি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসহ যাবতীয় মৌলিক অধিকারগুলো সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য ছিল।’

বিশেষত সে সময় সবচেয়ে বেশি লাভবান ছিলেন শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা। কাজের পাশপাশি তাদেরকে অবকাশ যাপনের জন্য সপরিবারে সমুদ্র সৈকতে পাঠানো হতো। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদেরকে এ জন্য অনুদান দেওয়া হতো।

আলিয়োসার মতে, সে সময় হয়তোবা মানুষের আয় আজকের দিনের মতো এতোটা বেশি ছিল না। কিন্তু, জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো সামর্থ্য সবার ছিল। যা হয়তো আজকের দিনে স্লোভেনিয়ার অনেক সাধারণ মানুষের নেই।

২০০৭ সালে স্লোভেনিয়া ইউরো জোনে প্রবেশ করে। আলিয়াসোর মতে, ইউরো জোনে প্রবেশ করার ফলে স্লোভেনিয়াতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আকস্মিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু, সে অনুপাতে মানুষের আয় তেমন একটা বাড়েনি।

গড়ে প্রত্যেক জিনিসের দাম দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরো জোনে প্রবেশের আগে এক কাপ কফির দাম যেখানে ছিল ৪০ সেন্ট, ইউরো জোনে প্রবেশের এক মাসের ব্যবধানে সে কফির দাম বেড়ে হয়ে যায় এক ইউরো।

আলিয়োসা আরও জানান, যদিও যুগোস্লাভিয়া ছিল কমিউনিজমের ভাবাদর্শে গড়ে উঠা একটি রাষ্ট্র, তবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবে সে সময় কোন বিধিনিষেধ ছিল না। প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে তার ধর্ম পালন করতে পারতেন। তবে রাষ্ট্র ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত।

আলিয়াসো বলেন, ‘সে সময় যুগোস্লাভিয়ার মানুষ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানিটি, অর্থোডক্স খ্রিষ্টানিটি ও ইসলাম— এ তিন প্রধান ধর্মে বিভক্ত ছিল।

স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ছিল ক্যাথলিক খ্রিষ্টানিটি। অন্যদিকে সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া ও মন্টিনিগ্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ছিল অর্থোডক্স খ্রিষ্টানিটি। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও কসোভোর বেশিরভাগ মানুষের ধর্ম ছিল ইসলাম।

আলিয়াসোর মতে, সে সময় মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু, স্বাধীনতা পরবর্তী স্লোভেনিয়াতে সে সম্প্রীতি অনেকটা কমে এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আলিয়োসোর মতে, তার জীবনের সেরা সময় ছিল যুগোস্লাভিয়া-যুগে ফেলে আসা রঙিন দিনগুলো।

একই সঙ্গে বেশ কিছু কারণে আলিয়াসো দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অভিন্ন ফেডারেশনের অংশ হওয়া সত্ত্বেও যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বৈষম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের বিভিন্ন অংশের মানুষের জীবনযাত্রার মানেও ব্যাপক তারতম্য ছিল।’

আলিয়াসো বলেন, ‘বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার স্লোভেনিয়া ছিল ফেডারেশনভুক্ত অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে মার্শাল টিটোর দূরদর্শীতার কারণে শেষ পর্যন্ত তারা একতাবদ্ধ হয়ে একই রাষ্ট্রের ছায়াতলে আবদ্ধ হতে পেরেছিল। কিন্তু মার্শাল টিটোর মৃত্যুর পর যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তাদের সেই ঐক্যে ভাটা পড়লে যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে ছয়টি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম নেয়।

ইয়োজে নাল, বর্তমানে একটি মোটরগাড়ি কোম্পানির আর্টিফিসিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্লোভেনিয়া যখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন তিনি কেবল যৌবনে পা দিয়েছেন।

ইয়োজে স্লোভেনিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ম্যাটলিকার অধিবাসী। তার মতে যুগোস্লাভিয়ার দিনগুলো স্লোভেনিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য সে সময় সুখকর ছিল না। যদিও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সব নাগরিক সুবিধার বন্দোবস্ত ছিল। কিন্তু, প্রকৃত অর্থে সে সময় মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না।

মার্শাল টিটোকে তিনি স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘যেহেতু যুগোস্লাভিয়া ছিল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সমস্ত সম্পদ ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। আমলাতন্ত্র সে সময় শিকড় গেঁড়ে বসেছিল। বাইরের দেশগুলো থেকে বিভিন্ন খাতে যে সব ঋণ আসতো, তার বৃহৎ অংশ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিজেদের কাছে রাখতেন।’

‘এজন্য দেখা যায়— যুগোস্লাভিয়ার পতন ঘটতে না ঘটতে স্লোভেনিয়াসহ ফেডারেশনের অন্যান্য দেশগুলোতে তারাই সবচেয়ে ধনীতে পরিণত হন যারা এক সময় কমিউনিস্ট সরকারের সবচেয়ে আস্থাভাজন লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তারা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো অত্যন্ত সস্তা মূল্যে নিজেদের নামে কিনে নিতে পেরেছিলেন।’

ইয়োজের মতে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় স্লোভেনিয়া, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় প্রাক্তন কমিউনিস্ট নেতারা সবচেয়ে ধনী। তাদের অনেকেই আজ অতি-ডানপন্থি রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

আলিয়োসার মতো ইয়োজেও যুগোস্লাভিয়ার পতনের কারণ হিসেবে মার্শাল টিটোর মৃত্যু পর নেতৃত্ব সংকটকে দায়ী করেন।

ইয়োজে জানান, টিটো-পরবর্তী যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের প্রত্যেকের দাবি ছিল তাদের নিজেদের অংশ থেকে কাউকে যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান করা হোক। সার্ব ও ক্রোয়েটদের একগুঁয়েমি মনোভাব এ ক্ষেত্রে যুগোস্লাভিয়ার পতনকে ত্বরান্বিত করে।

সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ ছিল— রাজধানী বেলগ্রেড তাদের সীমানাভুক্ত হওয়ায় রাষ্ট্রীয় আয়ের বড় অংশ তারা কুক্ষিগত করে রাখতো। অন্যান্যদেরকে তারা তাদের আয়ের প্রাপ্ত অংশ দিতে গড়িমসি করতো। অন্যদের ওপর তারা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতো।

১৯৮৯ সালে স্লোবোদান মিলোসেভিচ যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব সার্বিয়ার সঙ্গে ফেডারেশনভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।

ফেডারেশনভুক্ত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ধারণা হতে থাকে মিলোসেভিচ যুগোস্লাভিয়াকে সার্বিয়ার একটি উপনিবেশে পরিণত করতে চলছেন।

১৯৯১ সালের ২৫ জুন স্লোভেনিয়া প্রথম যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন থেকে আলাদা হয়ে নিজেদেরকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। কিন্তু, সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়া স্লোভেনিয়ার এ স্বাধীনতার দাবিকে অস্বীকৃতি জানায়। শুরু হয় সশস্ত্র যুদ্ধ যা দশ দিন স্থায়ী ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ছিল ইউরোপের ইতিহাসে প্রথম কোন সংগঠিত যুদ্ধ যা দশ দিন স্থায়ী হয়েছিল।

ভৌগলিক অবস্থানের কারণে স্লোভেনিয়ার পক্ষে  সহজে স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হয়।

সার্বিয়া এক সময় ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও কসোভো আক্রমণ করে বসে। তাদের ওপর নৃশংস গণহত্যা চালায়।

বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও কসোভো অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় তাদের ওপর বিভীষিকা নেমে আসে। শুরু হয় যুগোস্লাভ যুদ্ধ যা তৃতীয় বলকান যুদ্ধ নামেও পরিচিত।

একটা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ কতোটা উগ্র হতে পারে সার্বিয়ানরা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। যে কোনো আন্তর্জাতিক সূচকে সার্বিয়া ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থানে রয়েছে। গোটা ইউরোপে বলতে গেলে সার্বিয়ানরা অনেকটা এক ঘরে জাতি। তবে এখনও সার্বিয়ানরা নিজেদেরকে ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে পরিচয় দেয়।

গণভোটের মধ্য দিয়ে মেসিডোনিয়া আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে। মন্টিনিগ্রো শেষ পর্যন্ত সার্বিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে থেকে গেলেও ২০০৬ সালে সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে তারা পৃথক রাষ্ট্র গঠন করে।

২০০৮ সালে সার্বিয়া অধিকৃত আলবেনীয় অংশের অধিবাসীরা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। নতুন রাষ্ট্রের নাম দেওয়া হয় কসোভো। সার্বিয়া এখনও কসোভোকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে। কসোভোর স্বাধীনতা দাবিকে অস্বীকার করে।

কসোভো নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। কেননা, কসোভো এখনও সামগ্রিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায়নি।

বিশ্বমানচিত্র থেকে এভাবে চিরতরে নিঃশেষ হয় যুগোস্লাভিয়া নামক দেশটি। যুগোস্লাভিয়া পতনের কারণ হিসেবে স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও কসোভোর বেশির ভাগ অধিবাসীরা সার্বিয়ানদেরকে দায়ী করে থাকেন।

রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago