১১৭ দিন পর মাঠে ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে গেছে আরও প্রায় দুই মাস আগে। এবারে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ক্রিকেটভক্তদের মুখ। বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা, ১১৭ দিন পর মাঠে ফিরতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।
আইসিসির নতুন কোভিড-১৯ নীতিমালা অনুসরণ করে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় শুরু হবে প্রথম দিনের খেলা। ম্যাচের ভেন্যু সাউথ্যাম্পটনের এইজেস বোল।
দ্বিতীয় সন্তানের জনক হতে যাওয়া জো রুটের অনুপস্থিতিতে যে কোনো সংস্করণের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেবেন বেন স্টোকস। তিনি খেলতে নামবেন ক্যারিয়ারের ৬৪তম টেস্ট। তার বিপরীতে টস করতে দেখা যাবে আরেক তারকা অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডারকে। এখন পর্যন্ত খেলা ৪০ টেস্টের ৩২টিতেই উইন্ডিজের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
প্রায় চার মাস আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। গেল ১৩ মার্চ ৫০ ওভারের লড়াইয়ে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ৭১ রানে হারিয়েছিল প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডকে। এরপর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হয় অচলাবস্থা, আরও অনেক কিছুর মতো বন্ধ হয়ে যায় ক্রিকেট।
এই সময়ের মধ্যে মোট ২৫টি সিরিজ স্থগিত বা বাতিল হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে চারটি টেস্ট সিরিজ, ১২টি ওয়ানডে সিরিজ ও নয়টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সবমিলিয়ে বাতিল বা স্থগিত হয়েছে মোট ৭৬টি ম্যাচ (দশটি টেস্ট, ৩৫টি ওয়ানডে ও ৩১টি টি-টোয়েন্টি)।
ফেরার গল্প
গেল জুনের প্রথম সপ্তাহে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পরিবর্তিত সূচি প্রকাশ করে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। আগের সূচি অনুসারে, ওই মাসেই মাঠে গড়ানোর কথা ছিল দুদলের সাদা পোশাকের লড়াই।
ইসিবি তখন বলেছিল, সিরিজ আয়োজন করতে প্রয়োজন ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদন। সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে যায় দ্রুতই।
সিরিজ শুরু হওয়ার এক মাস আগে গেল ৯ জুন ইংল্যান্ডে পা রাখে উইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে বিমানে ওঠার আগে এবং ম্যানচেস্টারে পৌঁছানোর পর দুদফা তাদের খেলোয়াড়-স্টাফদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো হয়।
ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশনা অনুসারে প্রথমেই ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে হোল্ডারবাহিনীকে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুশীলন করতে পেরেছেন তারা। কোয়ারেন্টিন শেষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দুটি আন্তঃস্কোয়াড প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে তারা।
ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়-স্টাফদেরও দিতে হয়েছে করোনাভাইরাস পরীক্ষা। ক্যারিবিয়ানদের মতো তাদের কারও ফলও পজিটিভ আসেনি। প্রথম টেস্টের ভেন্যু এইজেস বোলে গেল ১ জুলাই থেকে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে তিন দিনের অনুশীলন ম্যাচ খেলেছে তারা।
যা কিছু নতুন
‘বায়োসিকিউর বাবল’ অর্থাৎ জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে ও দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হবে সিরিজের সবগুলো ম্যাচ।
করোনাভাইরাস মহামারির মাঝে ক্রিকেট গড়ালেও খেলোয়াড়দের সুরক্ষা যেন নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য গেল মাসে অন্তর্বর্তীকালীন কিছু নিয়মের অনুমোদন দিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রথমবারের মতো সেগুলোর প্রয়োগ ঘটতে দেখা যাবে এই সিরিজে।
বলে লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ: বলের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে অথবা বলকে চকচকে করতে লালা ব্যবহার করতে পারবেন না খেলোয়াড়রা।
প্রতি ইনিংসে একটি দলকে সর্বোচ্চ দুবার সতর্ক করা হবে। এরপরও একই কাজ করলে পেনাল্টি হিসেবে ৫ রান প্রতিপক্ষ দলের ইনিংসে যোগ হবে।
কেউ লালা ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে আম্পায়াররা বল জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশ দেবেন। এরপর পুনরায় খেলা শুরু করা যাবে।
কোভিড-১৯ বদলি: টেস্ট চলাকালীন কোনো ক্রিকেটারের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে, তার জায়গায় বদলি নামাতে পারবে সংশ্লিষ্ট দল।
এক্ষেত্রে ‘কনকাশন বদলি’র নিয়মই অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ বদলি ক্রিকেটার হবেন একই ধরনের; ব্যাটসম্যানের পরিবর্তে ব্যাটসম্যান, বোলারের পরিবর্তে বোলার। এটির অনুমোদন দেবেন ম্যাচ রেফারি।
স্থানীয় ম্যাচ অফিসিয়াল: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ভ্রমণের ওপরে বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই নিরপেক্ষ অফিশিয়াল দিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার নিয়মটি আপাতত বাতিল করা হয়েছে।
এই ম্যাচের পাঁচ অফিশিয়ালই ইংল্যান্ডের। মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন রিচার্ড ইলিংওর্থ ও রিচার্ড কেটেলবোরো। টিভি আম্পায়ার হিসেবে থাকছেন মাইকেল গফ। ম্যাচ রেফারি হলেন ক্রিস ব্রড। আর রিজার্ভ আম্পায়ার রাখা হয়েছে অ্যালেক্স ওয়ার্ফকে।
বাড়তি ডিআরএস রিভিউ: প্রতি ইনিংসে বাড়তি একটি ডিআরএস রিভিউ যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ টেস্টের প্রতি ইনিংসে রিভিউ থাকবে মোট তিনটি।
আরও
ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সামনে থেকে যারা লড়াই করছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ইসিবি এই সিরিজের নামকরণ করেছে ‘রেইজ দ্য ব্যাট’।
বর্ণ বৈষম্যের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে চলমান আন্দোলনের সমর্থনে দুই দল তাদের জার্সিতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ লোগো ব্যবহার করবে।
Comments