কিট আছে কিট নাই

গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে পাঁচ লাখেরও বেশি কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট পড়ে আছে।
Corona test logo
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে পাঁচ লাখেরও বেশি কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট পড়ে আছে।

ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রের চিত্র ঠিক এর বিপরীত। এসব জেলায় রয়েছে কিটের তীব্র সংকট। এর কারণে তারা বাধ্য হচ্ছেন দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা কমাতে, এমনকী বন্ধ রাখতেও।

বেশ কয়েকজন কিট সরবরাহকারীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) কিটগুলোর অনুমোদন ও বিতরণ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে। তারা কোনো প্রকার ব্যাখ্যা না দিয়ে মাঝে-মাঝে অদ্ভুত সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

প্রক্রিয়া অনুযায়ী, কিটের কার্যাদেশ পাওয়ার পর সরবরাহকারীকে কোনো সরকারিভাবে স্বীকৃত মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিটগুলোর বৈধতা যাচাই করে নিতে হবে।

এই যাচাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি কিটের নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল পেতে সাধারণত একদিন সময় লাগে।

এপ্রিলে ১১ লাখ কিটের জন্য নয়টি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে সিএমএসডি।

কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এক লাখ ইতালীয় কিটের কার্যাদেশ পেয়েছে। এর ভিত্তিতে মে মাসের শেষে জেনেটিক ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে ইতালি থেকে কিটগুলো নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি।

৩১ মে সিএমএসডিকে চিঠি দিয়ে কিটগুলো নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায় তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। চিঠির জবাবে সিএমএসডি জানায়, কিটের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃক বৈধ ঘোষিত হতে হবে।

তমা কনস্ট্রাকশনের জন্য কিট আমদানি করা জেনেটিক ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা কিটের নমুনা আইইডিসিআরকে দিয়েছি। সম্প্রতি, জানতে পেরেছি যে আইইডিসিআর এর প্রতিবেদন সিএমএসডিকে দিয়েছে। প্রতিবেদনে কী আছে তা আমরা জানি না। আমরা এ সম্পর্কে কোনো আপডেট পাইনি।’

‘কিটগুলো এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গুদামে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে,’ বলেও যোগ করেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে তমা কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কারণ বিষয়টি এখনও সিএমএসডিতে বিবেচনাধীন আছে।

কিট সরবরাহ করতে গিয়ে একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও।

স্টার্লিং মাল্টি টেকনোলজিস লিমিটেড এপ্রিলে এক লাখ কিট সরবরাহের কার্যাদেশ পাওয়ার পরের মাসেই তুরস্ক থেকে কিট আমদানি করে।

১৬ জুন সিএমএসডি প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে ২৫ হাজার কিট সরবরাহ করতে বলে। তাদের আগের এক লাখ কিটের কার্যাদেশটিও বাতিল করে সিএমএসডি।

স্টার্লিং মাল্টির নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা এক লাখ কিট সরবরাহ করার কার্যাদেশ পেয়েছি। পরে আমাদেরকে ২৫ হাজার কিট সরবরাহ করতে বলা হয়। আমরা ইতোমধ্যে এক লাখ কিট আমদানি করে ফেলেছি। সিএমএসডি কেনো এমন সিদ্ধান্ত নিলো তা জানি না।’ আরেক সরবরাহকারী ইউনিমেড লিমিটেডের সঙ্গে ১৯ মে এক লাখ কিট সরবরাহের চুক্তি করেছিল সিএমএসডি।

ইউনিমেড লিমিটেডের পরিচালক জামাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা ১৬ জুন সিএমএসডিকে চিঠি দিয়ে কিটগুলো গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাই। সিএমএসডি আমাদের জানায়, কিটের নমুনা আইইডিসিআর কর্তৃক বৈধ হতে হবে।’

‘২১ জুন আমরা আইইডিসিআরকে চিঠি দেই সিএমএসডির অনুরোধ অনুযায়ী কিটের নমুনা পরীক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর আইইডিসিআর আমাদের জানায়, সিএমএসডি চিঠি না দিলে তারা এ জাতীয় পরীক্ষা করতে পারে না।’

তার মন্তব্য, ‘আমরা এখন মাঝ সমুদ্রে আটকে আছি।’

এসবি সলিউশনের স্বত্বাধিকারী মো. শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, তারা এক লাখ কিটের কার্যাদেশ পেয়ে ২৩ মে সেগুলো আমদানি করে।

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে সিএমএসডি কর্মকর্তারা আমাদের ৫০ হাজার কিট সরবরাহ করতে বলেন এবং আমরা তাই করতে বাধ্য হয়েছি। বাকি কিটগুলো আমাদের কাছেই রয়েছে। সিএমএসডি কেনো এগুলো নিচ্ছে না, তা জানি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমএসডি পরিচালক আবু হেনা মোর্শেদ জামান এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দয়া করে ডিজি স্বাস্থ্য বা (স্বাস্থ্য) মন্ত্রণালয়ের প্রেস উইং বা আমার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তার সঙ্গে কথা বলুন। আমি এখানে নতুন এসেছি। এসব দেখার জন্য এবং আমার কিছু করণীয় থাকলে তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাকে সময় দেন।’

এছাড়া তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ এক ক্ষুদে বার্তায় লেখেন, ‘দয়া করে আমাদের মিডিয়া সেলের সঙ্গে কথা বলুন।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. আয়েশা আক্তার দাবি করেন, দেশে এখন আর পরীক্ষার কিটের সংকট নেই। কারণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এক লাখ ৮৮ হাজার কিট রয়েছে।

বেশ কয়েকটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের গুদামে কিট পড়ে থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি জানি যে এই কিটগুলোর বৈধতা যাচাই প্রক্রিয়া চলছিল। কিটগুলো অনুমোদন পেলে সেগুলোও গ্রহণ করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Global index for free and fair elections suffers biggest decline on record in 2023, democracy watchdog says

Lower voter turnout and increasingly contested results globally are threatening the credibility of elections, an intergovernmental watchdog warned on Tuesday, as its sub-index for free and fair elections suffered its biggest decline on record in 2023

1h ago