তিস্তায় চলছে বসতভিটা হারানোর কান্না

লালমনিরহাটে তিস্তার অনেক স্থানে ভয়াবহ ভাঙনে নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে মানুষের বসতভিটা। সব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের শতশত মানুষ। বসবাসের সামান্য সম্বল হারিয়ে নিরুপায় হয়ে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ, সরকারি রাস্তার উপর ও অন্যের জমিতে।
বসতভিটা হারিয়ে নাতিকে কোলে নিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে তিস্তার পাড়ে বসে আছেন এক বৃদ্ধ। ছবি: এস. দিলীয় রায়

লালমনিরহাটে তিস্তার অনেক স্থানে ভয়াবহ ভাঙনে নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে মানুষের বসতভিটা। সব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের শতশত মানুষ। বসবাসের সামান্য সম্বল হারিয়ে নিরুপায় হয়ে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ, সরকারি রাস্তার উপর ও অন্যের জমিতে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা গ্রামের আছিয়া বেওয়া (৬২) বলেন, ‘কষ্ট করে ১০ শতাংশের একটি বসতভিটা আর এক বিঘা জমির একটি বাঁশ ঝাড় করেছিলাম। কিন্তু, সবটুকু চলে গেছে তিস্তা নদীর গর্ভে। এখন পরিবারের লোকজন খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। জীবনে আর কোনো দিন জমি কিনে বসতভিটা করার সামর্থ্য হবে না।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মধুরাম গ্রামের রত্নেশ্বর বর্মণ (৬৫) বলেন, ‘তিস্তার গর্ভে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগান। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে কোনো নিচ্ছে না। সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছি সরকারি রাস্তার উপর। দুই বিঘা আবাদি জমিও চলে গেছে তিস্তার উদরে। তিস্তার ভাঙন ঠেকানো না গেলে বিপুল সংখ্যক বসতভিটা ও আবাদি জমি গিলে খাবে তিস্তা।’

আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় গ্রামের মহির উদ্দিন (৬২) বলেন, ‘গত পাঁচ দিনে এই গ্রামে তিস্তার গর্ভে বিশটি বসতভিটা চলে গেছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন ভাঙন কবলিত পরিবার। ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছেন যত্রতত্র। তিস্তাপাড়ে এখন শুধু বসতিভিটা হারানোর কান্না চলছে।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলাপাড়ে ২০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব স্থানে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েকদিনে কী পরিমাণ বসতভিটা, আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে তার হিসাব নির্ণয়ের কাজ চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব স্থানে প্রাথমিকভাবে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং শিগগির তা ডাম্পিং ও প্লেসিং করা হবে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোতে প্রাথমিকভাবে ভাঙন ঠেকানোর পর পরবর্তীতে গুরুত্ব অনুযায়ী স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকাতে প্রকল্প করে কাজ করা হবে। ভাঙনকবলিত মানুষকে প্রশাসনিকভাবে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘ভাঙনকবলিত পরিবারের প্রত্যেককে আপাতত নগদ ৭ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাদের এই মুহূর্তে সরকারি খাস জমির উপর ঘর করে বসবাসের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ভাঙনকবলিত পরিবারকে সরকারিভাবে ঘর দিয়ে সহায়তা করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

29m ago