কর্মহীন প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মস্থলে পুনর্নিয়োগে সরকার কূটনৈতিকভাবে তৎপর: প্রধানমন্ত্রী

ছবি: পিআইডি

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন প্রবাসী শ্রমিকেরা যাতে পুনর্নিয়োগ পেতে পারে সেজন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দুস্থ শ্রমিকদের জরুরি ত্রাণ সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশি কর্মীরা যাতে করোনা-পরবর্তী সময়ে পুনরায় কর্মে নিয়োগ পেতে পারেন সেজন্য বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।’

সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সময়ে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে আমরা দুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে প্রায় ১১ কোটি টাকার ওষুধ, ত্রাণ ও জরুরি সামগ্রী বিতরণ করেছি।’

শেখ হাসিনা আজ দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশনে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন এবং সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

এর আগে সাত দিন বিরতির পর বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের মুলতবি বৈঠক পুনরায় শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে চাকরিচ্যুত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে বিদেশফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য আমরা ইতোমধ্যেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের এবং প্রবাসে করোনায় মৃত কর্মীর পরিবারের উপযুক্ত সদস্যকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে বিনিয়োগ ঋণ প্রদানের জন্য আমরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছি। এ সংক্রান্ত নীতিমালা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।’

সংসদ নেতা বলেন, ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী শুধুমাত্র বৈধ ও নিবন্ধিত অভিবাসী মৃত কর্মীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আমরা তিন লাখ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে, এ চাপ প্রশমিত করার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্নমুখী কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে আমি কতিপয় সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট এ বিষয়ে পত্র প্রদান করেছি। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যৌথভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’

‘আমাদের সরকারের গৃহীত খাদ্য ও চিকিৎসা কূটনীতির আওতায় বিশ্বে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও ওষুধ প্রেরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যেখানে লক্ষাধিক শ্রমিক ফেরত এসেছেন সেখানে বাংলাদেশের মাত্র ২২ হাজার শ্রমিক ফেরত এসেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা এখনও কম রয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ফিরে আসা শ্রমিকদের টেকসই পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং যথাযথ সহায়তা প্রদানের জন্য একটি ডেটাবেজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া যারা পুনরায় বিদেশে যেতে সক্ষম তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রবাসীদের বিদেশে চাকরি ধরে রাখা এবং নতুন নতুন পেশায় যোগদান এবং কৃষিখাতে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকোভারি ফান্ড’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই ফান্ডটি হবে ‘ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড’ ও ‘ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স ফান্ড’ এর অনুরূপ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে গমনাগমনের সুবিধার্থে আমরা ইতোমধ্যে কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়া এবং এমিরেটসকে বাংলাদেশে নিয়মিত বিমান চলাচলের অনুমতি প্রদান করেছি। তাছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমান চালু করা হয়েছে।’ ঢাকা-কুয়ালামপুর রুটে বিমান চালনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।

করোনা চলাকালীন পাসপোর্ট অধিদফতরে প্রাপ্ত ২ লাখ ১৫ হাজার আবেদনের অধিকাংশ পাসপোর্ট মুদ্রণ করে বিদেশস্থ বিভিন্ন মিশনে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাসপোর্ট না থাকার কারণে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য যে সকল পাসপোর্ট মুদ্রণের অপেক্ষায় রয়েছে, তা দ্রুত মুদ্রণ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

Activities of certain entities, and activities supporting them can now be banned

1h ago