পুরস্কারের টাকায় ১৫ কলেজ শিক্ষার্থীকে সাইকেল দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান
বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার। এখন কলেজ বন্ধ তাই কলেজে যেতে হয় না একাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা রানীকে। কিন্তু কলেজ খুললে তাকে যেতে হবে।
বাড়ি থেকে কলেজে অটোরিক্সা অথবা ইজিবাইকে যাতায়াত করতে যে টাকা খরচ হয় তা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের এই শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা ও তার পরিবারকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সাইকেল চালানো শিখেছিল প্রিয়াংকা। কিন্তু, পরিবারের সামর্থ্য ছিল না সাইকেল কিনে দেওয়ার। অবশেষে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের এই শিক্ষার্থী ইউনিয়ন পরিষদে থেকে সাইকেল পেয়ে খুশি। সাইকেলে চড়ে কলেজে যাতায়াত করতে পারবে। পরিবারকে ভাবতে হবে না যাতায়াত খরচ নিয়ে।
প্রিয়াংকার মতোই চলবলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র পরিবারের আরও ১৪ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে সাইকেল। তারা সবাই কাকিনা উত্তরবাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী।
চলবলা ইউনিয়নের ১৫ শিক্ষার্থী এক সঙ্গে সাইকেলে চড়ে কলেজে যাতায়াত করলে সেই দৃশ্য স্থানীয়ভাবে নারী শিক্ষাকে বেগবান করবে বলে করেন এলাকাবাসীরা।
কলেজ শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা রানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একটি সাইকেল আমার পড়াশুনার ইচ্ছাকে আরও শক্তিশালী করবে।’
একই ইউনিয়নের সোনাহাট গ্রামের একাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী আলমা খাতুন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চিন্তায় ছিলাম কীভাবে কলেজে যাতায়াত করবো। পরিবারের পক্ষ থেকেও খরচ দেওয়া সম্ভব নয়। সাইকেলটি কলেজে যাতায়াত করতে সাহায্য করবে এবং পড়াশুনায় আরও মনোযোগী রাখবে।’
গতকাল বুধবার বিকেলে ওই ইউনিয়ন পরিষদে ১৫ কলেজ শিক্ষার্থীর হাতে সাইকেল তুলে দেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রবিউল হাসান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিহানুর রহমান মিজু।
স্থানীয় সরকার থেকে চলবলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে কর্মদক্ষতার মূল্যায়ণ করে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ ১৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তিনি সেই টাকা দিয়ে ১৫টি সাইকেল কিনে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেন।
চলবলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যেহেতু আমার ইউনিয়নের ছাত্রীরা কলেজে যাতায়াত নিয়ে দুশ্চিস্তায় ছিল তাই আমার পুরস্কারের টাকা দিয়ে তাদের সাইকেল কিনে দিয়েছি।’
এ সহায়তা তার ইউনিয়নে নারী শিক্ষা উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ছাত্রীদের দেওয়া সাইকেলের ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর রাখবেন এবং প্রয়োজনে তা মেরামতেও সহায়তা করবেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গ্রামের নারী শিক্ষার্থীরা সাইকেলে চড়ে এক সঙ্গে কলেজে যাতায়াত করবে। এটা গ্রামে নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করবে। এতে নারী শিক্ষার্থীরা সাহসী হবে এবং পড়াশুনায় তাদের মনোবল আরও দৃঢ় হবে।’
Comments