ইউএনও-পিআইও দ্বন্দ্ব

লক্ষ্মীপুর থেকে ফেরত গেল কাবিখার ১৬০ টন গম

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা থেকে ফেরত গেছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের ১৬০ মেট্রিক টন গম। ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কাবিখা দ্বিতীয় পর্যায়ের এ বরাদ্দ এসেছিল।
Lakshmipur Map
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা থেকে ফেরত গেছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের ১৬০ মেট্রিক টন গম। ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কাবিখা দ্বিতীয় পর্যায়ের এ বরাদ্দ এসেছিল।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীন চৌধুরী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দেলোয়ার হোসেনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও কাজের সমন্বয়হীনতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ অবস্থায় বাতিল হওয়া প্রকল্পের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের (ইউপি) মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফোরামের নেতারা বলছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার জন্য প্রকল্পের বরাদ্দ ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে রায়পুরবাসীকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করা হলো। দ্বন্দ্ব নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাবিখা প্রকল্পের অধীনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বরাদ্দে ১২টি প্রকল্পের বিপরীতে ৯৬ মেট্রিক টন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের একটি প্রকল্পের ৯ মেট্রিক টন ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১২টি প্রকল্পের বিপরীতে ৫৫ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ হয়। রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এসব বরাদ্দ হয়। তবে পিআইও’র ভাষ্যমতে, ইউএনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গত ৩০ জুন বরাদ্দগুলো ফেরত পাঠিয়েছেন।

রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান ফোরামের সভাপতি ও বামনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফাজ্জাল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার ঘটনাটি রায়পুরের ইতিহাসে এই প্রথম। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের স্বাভাবিক উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হবে। চলমান সংকটগুলো নিয়ে আমরা ডিসির সঙ্গে বৈঠক করব।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার চাকরি জীবনে এত অলস ইউএনও দেখিনি। তিনি ২৮ জুন রাতেও আমাদের বাসায় ডেকে কাবিখার দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের ১৬০ মেট্রিক টন বরাদ্দ গম ছাড় দেওয়ার কথা বলেছিলেন। পরে তার একগুঁয়েমির কারণে বরাদ্দগুলো ফেরত যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প তালিকা করে অনুমোদনের জন্য ইউএনও’র কাছে পাঠানো হলে তিনি উৎকোচের জন্য ফাইল সই করতে গড়িমসি করেছেন। এ ছাড়াও, বিভিন্ন প্রকল্পে তার ইচ্ছামতো কাজ না করলে তিনি হয়রানি করেন।’

এ বিষয়ে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার জন্য তার ব্যবহৃত সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিক ফোন করলে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দুই কর্মকর্তার সমন্বয়হীনতার কারণে বরাদ্দটি ফেরত গেছে। এতে রায়পুরবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের জন্য অসম্মানজনক। সরকার বরাদ্দ দিয়েছে কাজ করার জন্য। কিন্তু, এই দুই কর্মকর্তা কাজ না করার কারণে সরকারের বরাদ্দ ফেরত যাচ্ছে।’

উপজেলা পরিষদের আগামী সভায় ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভায়ও এই বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন মামুনুর রশিদ।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জন চন্দ্র পাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার বিষয়টি আমি অবগত নই।’ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

16m ago