একজন মানবিক চিকিৎসক সন্দীপন দাশ

মানবতার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সন্দীপন দাশ। তিনি নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হঠাৎ পাশের কেবিনে করোনায় আক্রান্ত আরেক রোগী অসুস্থ বোধ করায় তিনিই সেবা দেন।
সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মহামারির শুরু থেকেই হাসপাতালে সেবা দিয়ে আসছিলেন ডা. সন্দীপন। গত ১৬ জুন জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা গিলে তিনি নমুনা পরীক্ষা করাতে দেন। ওই দিনই জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তির পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিকালে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।
অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ২৭ জুন তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। তারপরও পাশের কেবিনে থাকা রোগী অসুস্থ বোধ করলে দুর্বল শরীরে ছুটে যান তাকে দেখতে। তিনিও একজন চিকিৎসক। ডা. সন্দীপন পর্যবেক্ষণ করে জানান, ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই। আপনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন।’
এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তি ছবিটি পোস্ট করে লেখেন, ‘এর চেয়ে আবেদনময়ী কোনো দৃশ্য পৃথিবীতে হয় কি? আমার জানা নেই। এই দুইজন প্রিয় মানুষই একটা দীর্ঘ সময় আইসিইউতে যুদ্ধ করে ফিরেছেন কেবিনে... কোভিড হার মানছে না কিছুতেই। তবু এর মাঝে নিজের অসুস্থতা ভুলে গেলেন ক্যানুলা হাতে দুর্বল শরীরে নিজে রোগী তবুও ভাইয়ের পাশে স্টেথো হাতে। এই তো ডাক্তার। মহান পেশার মানুষ।’
আরিফ মাহমুদ নামে আরেকজন ছবিটি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘আমরা প্রার্থনায়। সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন তাড়াতাড়ি।’
এভাবে অসংখ্য মানুষ শুভ কামনা জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নয়, পরিচিত মানুষেরা প্রতিদিন ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন আর তার সুস্থতা কামনা করছেন।
ডা. সন্দীপনের এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার অনেক আগে থেকেই চট্টগ্রাম শহরে তিনি একজন মানবিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। গরিব ও অসহায় রোগীদের তিনি বিনা ফিতে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বহুদিন যাবত।
এখনো হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে তিনি টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নগরীর জামাল খান সড়কের বাসিন্দা শুভেচ্ছা ঘোষ বলেন, ‘আমার বাবা গত ছয় বছর যাবত ডা. সন্দীপনের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত পাঁচ বছর যতবারই তার চেম্বারে বাবাকে নিয়ে গিয়েছি, তিনি কোনো ভিজিট নেননি। এ রকম মানবিক চিকিৎসক আজকাল বিরল।’
যোগাযোগ করা হলে ডা. সন্দীপনের স্ত্রী ডা. রূপা দত্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সন্দীপনের শারিরীক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো কিন্তু এখনো অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে।’
ডা সন্দীপন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থ বোধ করছেন এবং শিগগির সুস্থ হয়ে আবার হাসপাতালে রোগীদের সেবা করতে চান।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার একান্ত ইচ্ছা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিই। রোগীরা বড় অসহায়। দ্য ডেইলি স্টারের মাধ্যমে আমি সবাইকে আহ্বান জানাবো, যদি কেউ অসুস্থ বোধ করেন অন্তত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পর্যন্ত কষ্ট করে নিয়ে আসেন। এখানের সব ডাক্তার, সেবিকা ও স্বাস্থ্য কর্মীরা অত্যন্ত আন্তরিক। আমি যখন নিজে সেবা দিয়েছি তখনো দেখেছি, এখন রোগী হয়ে যখন চিকিৎসা নিচ্ছি তখনো দেখছি। রোগীকে এখানে নিয়ে এলে চিকিৎসা পাবেন, এইটুকু আমি বলতে পারি।’
Comments