মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক দম্পতিকে হত্যা চেষ্টা

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আহসান কবির রনি ও তার স্ত্রী ডা. আফসানা সুলতানা লিজার ওপর হামলার ঘটনা হয়েছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আহসান কবির রনি ও তার স্ত্রী ডা. আফসানা সুলতানা লিজার ওপর হামলার ঘটনা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত রাত সাড়ে ৪টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি বাসভবনে ঘুমন্ত অবস্থায় চিকিৎসক দম্পতির ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান অজ্ঞাত দৃর্বৃত্ত।

আহত দুই চিকিৎসককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিঠাপুকুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা রাকিব হোসেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ আটক হননি। 

জানা গেছে, দুই চিকিৎসকই কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন, তবে দুজনেই সুস্থ হওয়ার পর তাদের কাজে ফেরেন।

আহত ডা. লিজা জানিয়েছেন, গরমের কারণে ঘরের জানালা খোলা ছিল। সকাল সাড়ে ৪টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি তার দুহাত জানালার ভেতরে দিয়ে একটি কাপড় দিয়ে রনির গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন। রনি চিৎকার করলে, তার স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যান।

ডা. রনি জানান, ওই ব্যক্তি মুখে মাস্ক পরা ছিলেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর সীমানা প্রাচীর টপকে পালিয়ে যান ওই ব্যক্তি।

রনি বলেন, সাত মাস আগে উপজেলা কমপ্লেক্সে যোগ দেন তিনি।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শামীমা নাসরীন বলেন, আরএমও ডা. রনি দিনরাত এক করে এ এলাকার মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন৷ 

‘চুরির উদ্দেশে এ হামলা হয়নি বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। কারণ পাশেই তাদের দুজনের মোবাইল, ট্যাব ছিল তা ছুঁয়েও দেখা হয়নি৷ এ ঘটনায় তারা দুজনই মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত৷’

তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমাদের অন্য চিকিৎসকেরাও কর্মস্থলে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না৷ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা ডাক্তাররা কোথায় নিরাপদ- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

চিকিৎসক দম্পতিকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস’ সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর)।

সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘ডা. আহসান কবির রনি আরএমও হিসেবে ওই হাসপাতালে যোগদানের পর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। তার সততা ও নিষ্ঠার জন্য হাসপাতালের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং চারপাশের কিছু দুষ্কৃতিকারীর চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, আমার এই বন্ধু তাদের উচ্চশিক্ষার শেষ প্রান্তে ছিলেন। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে নিশ্চিন্তে বড় কোনো কর্পোরেট হাসপাতাল কিংবা দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন। কিন্তু শুধুমাত্র এই দেশের প্রান্তিক মানুষের সেবা করার জন্য আজ ওরা মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত।

হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘কেন আমার বন্ধু এই দেশের একজন ডাক্তার হলো যেই দেশে ডাক্তার এর গায়ে হাত তোলা সবচেয়ে সহজ কাজ।’

Comments