ঈদুল আজহার পর বাড়তে পারে করোনার সংক্রমণ, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

দেশের কয়েক কোটি মানুষ প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায়, আসন্ন কোরবানির ঈদের পর কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার তীব্রতর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
cattle_market-3.jpg
ঈদুল আযহার পশুর হাট। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

দেশের কয়েক কোটি মানুষ প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায়, আসন্ন কোরবানির ঈদের পর কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার তীব্রতর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তারা পরামর্শ দিয়ে বলেন, সরকার এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে যেখানে একই স্থানে পশু ক্রয়-বিক্রয় ও জবাই করা হবে এবং সেখান থেকেই ইউনিয়ন, গ্রাম বা ওয়ার্ডের মতো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে মাংস বিতরণ করা হবে।

অনলাইনে গবাদি পশু ক্রয়-বিক্রয়ের প্রচারণার পাশাপাশি, প্রচলিত পশুর হাটগুলোতে পশু কেনা-বেচা, সেগুলো জবাই ও মাংস বিতরণকালে স্বাস্থ্য নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহার ১৫ দিন পরে আমরা আবারও কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়ার ক্ষেত্রে তীব্রতা দেখতে পারি, কারণ কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চারপাশে বিশাল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।’

দেশে করোনা সংক্রমণের হার ২১-২২ শতাংশ (পরীক্ষিত কোভিড নমুনাগুলোর মধ্যে) রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের পর দেশে সংক্রমণ হারে তেমন বড় পার্থক্য দেখা না গেলেও ঈদুল আজহার বিষয়টি ভিন্ন।’

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল জানান, তারা সম্প্রতি সরকারকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম শহরাঞ্চলের মধ্যে কোনো গবাদি পশুর হাট স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

সারাদেশের গবাদি পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে বজায় রাখা প্রয়োজন বলেও সরকারকে জানিয়েছে উপদেষ্টা কমিটি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউইচও) সাবেক আঞ্চলিক (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, যদি কোরবানির প্রচলিত প্রক্রিয়া এ সময়েও অব্যাহত থাকে তাহলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না এবং এর মাধ্যমে সারাদেশে তীব্র আকারে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।

তারা জানান, দেশে প্রতিবছর সাধারণত এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানি দেওয়া হয় এবং পশু কেনা-বেচা এবং জবাই করা থেকে শুরু করে কোরবানির পশুর মাংস বিতরণ ও সংগ্রহের কাজে সরাসরি জড়িত থাকে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ।

এ দুই বিশেষজ্ঞ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার আওতায় গোটা দেশে পশু কোরবানির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে, সৌদি আরবের মডেলটি অনুসরণ করা যেতে পারে। হজযাত্রীরা সেখানে পশু কোরবানি করার জন্য অর্থ জমা দিলেও, পশু কেনা, জবাই বা মাংস বিতরণে তাদের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘কোরবানির ঈদে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, কারণ এসময় দেশে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে এবং প্রায় ছয় কোটি মানুষ সরাসরি এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির পুরো প্রক্রিয়াটি আমরা একটি জাতীয় ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারি। আমরা জানি, সৌদিআরবে যারা পশু কোরবানি করেন তারা সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত হন না। আমাদের দেশে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় কিনা বা কোরবানির পশুর সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য একটি একক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।’

‘আমরা যদি এটি করতে পারি তবে সামাজিক দূরত্ব বহুলাংশে বজায় রাখা সম্ভব হবে এবং পশু খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না,’ যোগ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক।

অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘সৌদি আরব এবং অন্য কিছু উন্নত দেশের মতো, মাংস বিতরণ থেকে শুরু করে কোরবানির পশু কেনা সব কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সরকার কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘যদি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা চালু না করা যায় তাহলে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ইউনিয়ন, গ্রাম বা ওয়ার্ডের মতো প্রতিটি অঞ্চলের জন্য সরকার একক ব্যবস্থাপনা চালুর উদ্যোগ নিতে পারে।’

‘অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের প্রচারণার পাশাপাশি, পশুর হাটগুলো বিভিন্ন শহরের বাইরে বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে’, যোগ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago