অ্যান্টিজেন ভিত্তিক করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার পরামর্শ জাতীয় কমিটির

করোনাভাইরাস পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অ্যান্টিজেন ভিত্তিক করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মহামারি প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
Antigen Kit.jpg
প্রতীকি ছবি। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অ্যান্টিজেন ভিত্তিক করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মহামারি প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

একইসঙ্গে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট না বসাতে এবং ঈদের ছুটিতে এই চার এলাকা থেকে দেশের অন্যত্র যাতায়াত বন্ধ রাখারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।

আজ শুক্রবার জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি তার ১৪তম অনলাইন সভায় নিম্নলিখিত প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে-

১. কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা ও মানোন্নয়নের জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা বেশি প্রয়োজন। অটো-এক্সট্র্যাকশন মেশিনের সহযোগিতায় পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব। বিভিন্ন পর্যায় থেকে দক্ষ জনশক্তিকে কোভিড-১৯ পরীক্ষাগারে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।

পরবর্তীতে কোনো স্থানে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সৃষ্টি থাকলে সেসব স্থানকে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া থেকে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত সময় কমানো প্রয়োজন। কোভিড-১৯ পরীক্ষার তথ্য দেরিতে পৌঁছালে আইসোলেশন ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

অ্যান্টিজেন ভিত্তিক কোভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমতির জন্য ঔষধ প্রশাসনকে পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে করে অতিসত্ত্বর কোভিড-১৯ পরীক্ষার সুযোগ প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সিদ্ধান্তে বহাল থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় (সেরোসার্ভিলেন্সের ক্ষেত্রে আইজিজি ও আইজিএম আলাদা করা যায় এমন অ্যান্টিবডি কিটের প্রয়োজন, সাম্প্রতিক সংক্রমণ ও পূর্বের সংক্রমণ পৃথক করা না গেলে সেরোসার্ভিলেন্স অসম্পূর্ণ থেকে যাবে)। সেরোসার্ভিলেন্স কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বেসরকারিভাবে এই কার্যক্রম না করার মতামত দেওয়া হয়।

এ ছাড়া, আরটি-পিসিআর টেস্টিং কিট এক প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহের পরিবর্তে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে করে টেস্টিং কিটের সংকট সৃষ্টি না হয়। এ ছাড়াও, একই ধরনের টেস্টিং কিটের পরিবর্তে অধিকতর উন্নত এবং সুলভ মূল্যের টেস্টিং কিট জোগাড়ের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

২. বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও কোভিড-১৯ আক্রান্ত নন এমন প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিট গঠন বিষয়ে আলোচনা হয় ও অতিসত্বর উক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও, কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রসূতি মায়েদের সেবার জন্য পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

৩. প্রবীণরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি এবং বিভিন্ন কারণে তারা কোভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের স্থানে যেতে সক্ষম হচ্ছেন না, যার ফলে প্রবীণদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তাদের সহজভাবে অথবা বিশেষভাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষার, সম্ভব হলে বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

৪. জাতীয় পরামর্শ কমিটির সদস্যসহ অনেকেই হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বিভিন্ন হাসপাতালে প্রদান করেছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে ৫০টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বিভিন্ন হাসপাতালে ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে এবং আরও ১০০টি স্থাপন করা হবে। জাতীয় পরামর্শক কমিটি তাদের সকলকে সাধুবাদ জানায়। সরকারিভাবে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ক্রয় প্রক্রিয়াধীন, এমতাবস্থায় জাতীয় কারিগরি জাতীয় পরামর্শ কমিটির পক্ষ থেকে পরামর্শ থাকবে যেন উক্ত ক্রয় প্রক্রিয়ায় সঠিক মাননিয়ন্ত্রণ ও সঠিক মূল্যে ক্রয় নিশ্চিত করা হয়।

৫. কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের হয়রানি কমিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খালি শয্যার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন দেওয়া এবং নির্দিষ্ট হাসপাতালের সামনে ডিসপ্লে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও, আন্তঃহাসপাতাল নেটওয়ার্কিংয়ে একটি হাসপাতাল অপর হাসপাতালের খালি শয্যার তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে করে রোগীদের সঠিক হাসপাতালে প্রেরণ করতে পারে।

৬. বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রস্তুতের বিষয়টিকে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটি স্বাগত জানায়, তবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কমিটির পরামর্শ থাকবে যে, ভ্যাকসিন প্রস্তুত অথবা আবিষ্কার অবশ্যই সরকার, বিএমআরসি ও ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদনক্রমে এবং ভ্যাকসিন প্রস্তুতিতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে করতে হবে।

৭. কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জাতীয় পরামর্শক কমিটি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি, এ অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবনযাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জাতীয় পরামর্শক কমিটি ঢাকা ও তার আশেপাশের এলাকায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পরামর্শ দেয়। ঈদুল আজহাতে (কোরবানি ঈদে) পশুর হাট বসার ক্ষেত্রে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সুপারিশ করে যে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে যেন পশুর হাট স্থাপন না করা হয়। এক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া, অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা পালন সাপেক্ষে কোরবানি পশুর হাট বসানো যেতে পারে। কোরবানি পশুর হাট স্থাপন ও পশু জবাই এর ক্ষেত্রে নীচের নিয়মসমূহ অনুসরণ প্রয়োজন-

কোরবানির পশুর হাট শহরের অভ্যন্তরে স্থাপন না করা।

কোরবানি পশুর হাট খোলা ময়দানে হতে হবে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।

বয়স্ক ব্যক্তি (পঞ্চাশোর্ধ) এবং অসুস্থ ব্যক্তি পশুর হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

পশুর হাটে প্রবেশ ও বাহিরের পৃথক রাস্তা থাকতে হবে।

পশুর হাটে আগমনকারী সব ব্যক্তির মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।

কোরবানি পশু জবাই বাড়িতে না করে শহরের বাইরে সিটি করপোরেশনের দ্বারা নির্ধারিত স্থানে করতে হবে। 

অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ির বাইরে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হলে, তা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।

৮. কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে ঈদের ছুটির সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

Comments

The Daily Star  | English
Cox’s Bazar Rail Station

Cox’s Bazar Rail Station: A modern marvel awaits travellers

The recently constructed Cox’s Bazar rail station aims to attract more tourists to the country’s renowned destination, the Cox’s Bazar sea beach.

17h ago