করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে ২৭৫টি স্থানীয় সংবাদপত্র: বিআইজেএন

করোনাকালে দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে প্রকাশিত ৪৫৬টি স্থানীয় সংবাদপত্রের মধ্যে ২৭৫টি (৬০.৩১%) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অনিয়মিত অর্থাৎ বিজ্ঞাপন পেলে অথবা অর্থসংস্থান হলে ১৮টি (৩.৯৫%) সংবাদপত্র প্রকাশ করা হয়।

করোনাকালে দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে প্রকাশিত ৪৫৬টি স্থানীয় সংবাদপত্রের মধ্যে ২৭৫টি (৬০.৩১%) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অনিয়মিত অর্থাৎ বিজ্ঞাপন পেলে অথবা অর্থসংস্থান হলে ১৮টি (৩.৯৫%) সংবাদপত্র প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক (বিআইজেএন) এর এক জরিপ এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ শনিবার ওই জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। 

জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মার্চের করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রায় সব স্থানীয় সংবাদপত্র পুরোপুরি কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এরপরে এসব কাগজের মধ্য থেকে উল্লিখিত সংখ্যক সংবাদপত্র নিয়মিত এবং অনিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। কমপক্ষে ছয়টি জেলায় কোনো সংবাদপত্র আর প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

সব মিলিয়ে এই জরিপে স্থানীয় সংবাদপত্র বন্ধে আর্থিক সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে বিআইজেএন।

জরিপে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের ৩৪টি জেলার ৪৫৬টি স্থানীয় দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকার উপরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। মিডিয়াভুক্ত সংবাদপত্রগুলোর তালিকার ভিত্তিতে নয়, স্থানীয়ভাবে যেসব সংবাদপত্র করোনাকালের আগে প্রকাশিত হতো- সেগুলো জরিপের আওতায় আনা হয়।

জরিপের তথ্য সংগ্রহের সময়কাল ছিল ২৩ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে ‘উদ্দেশ্যভিত্তিক দৈবচয়ন নমুনায়ন’ (Purposive Random Sampling) পদ্ধতিতে জেলা নির্বাচন করা হয়। এখানে মূল নির্ণায়ক ছিল ঢাকা শহরের বাইরে স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে গবেষণার আওতায় নিয়ে আসা। এরপরে দৈনিক এবং সাপ্তাহিক সংবাদপত্র নির্বাচন করা হয় প্রচার, পাঠকের কাছে পৌঁছানো এবং নিয়মিত প্রকাশের ধরণের ভিত্তিতে। স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়া ছিল এই জরিপের মূল লক্ষ্য।

সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া বিষয়ে জানতে স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ মানুষ মিলিয়ে ২৮৭ জনের মতামত সংগ্রহ করে বিআইজেএন।

তাদের মধ্যে ৮৬.৪১ শতাংশ মনে করেন স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদপত্র ওই স্থানের প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে থেকে কখনো কখনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীপর্যায়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, অতিব্যবহার, নানাবিধ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আইন বহির্ভূত ও রাষ্ট্রীয় নিয়ম কানুন ভঙ্গের খবর প্রচারের এক-একটি মাধ্যম ছিল। যদিও এতে ব্যাপক মাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ে নানাবিধ বাধা বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টাও বিদ্যমান ছিল। কিন্তু, ওসব খবরগুলো কোনো না কোনোভাবে এক বা একাধিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতো। এসব পত্রিকা চালু থাকলে করোনাকালে নানা খবরাখবর ও তথ্য  প্রকাশিত হতো।

এদের কেউ কেউ মনে করেন, স্থানীয়রা খুব সহজে এসব সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের কাছে যেতে পারতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব খবর কোনো না কোনো স্থানীয় কাগজে ছাপা হতো।

কারো মতে, স্থানীয় কাগজে যে সব খবরাখবর পাওয়া যায় তার অধিকাংশই জাতীয় সংবাদমাধ্যমে স্থান পায় না। কিছু জাতীয় পত্রিকায় এই ধরনের খবরগুলো সামান্য ছাপা হলেও বিস্তারিত পাওয়া যায় না।

৮৬.৪১ শতাংশের একটি অংশ জানান, স্থানীয় প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং তাদের অনুসারীরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের কারণে কিছুটা হলেও চাপের মধ্যে থাকতো।

৮.৭২ শতাংশ আবার কিছুটা ভিন্ন মতামত দেন। তাদের মতে, এসব সংবাদপত্রের মাধ্যমে নানা ধরণের সাংবাদিকতা বহির্ভূত অপকর্ম করা হতো। সাংবাদিক নাম ভাঙিয়ে তারা নানা ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পক্ষের সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্ত ছিল।

এর বাইরে ৪.৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সংবাদপত্র বন্ধ নিয়ে কোনো ধরণের মতামত জানাননি।

ওই জরিপে বিআইজেএন তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। এগুলো হলো- স্থানীয় পর্যায়ে বিশাল সংখ্যক সংবাদপত্র বন্ধ ও অনিয়মিত হওয়ার ফলে জনগণের সংবাদপ্রাপ্তির বিষয়টি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় নানা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, নানামাত্রিক কর্তৃত্বপরায়ণতা বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।

প্রশাসনের এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্তরকেন্দ্রীক খবর প্রাপ্তির দূরত্ব বেড়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে খবর প্রাপ্তিতে একক কেন্দ্রীকতার  সৃষ্টি হতে পারে।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার এবং সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপরে সংবাদপত্র বন্ধের কারণে একটি বড় মাত্রার দুর্বলতা দেখা দেবে।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্রমাগত দুর্বলতা আরও সংকীর্ণ ও দুর্বল  হয়ে পড়বে। যা পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও কাঠামোর জন্য একটি বড় ধরণের ক্ষতি।

স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও মুক্ত সংবাদমাধ্যমে পেশাদার সাংবাদিকতায় আগ্রহীদের সংখ্যা কমে যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Ban on plastic bags a boon for eco-friendly sacks

Availability of raw materials now a challenge

19m ago