৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি

অবনতি হয়েছে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির

ব্রহ্মপুত্র নদ এবং তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন দুই জেলার তিন লাখের বেশি মানুষ। গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু সড়ক, শহর রক্ষা বাঁধ ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন অনেকেই। বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
Lalmonirhat_Gobardhan_Flood.jpg
আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধন গ্রামে এক নারী তার সন্তানকে কোলে নিয়ে অপেক্ষা করছেন। ছবি: স্টার

ব্রহ্মপুত্র নদ এবং তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন দুই জেলার তিন লাখের বেশি মানুষ। গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু সড়ক, শহর রক্ষা বাঁধ ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন অনেকেই। বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ রোববার সকাল থেকে হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রাতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপরে উঠে গিয়েছিল। লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার প্রধান দুই নদী তিস্তা ও ধরলা ছাড়াও আটটি নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সকাল থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া ঘাট পয়েন্টে পাঁচ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের প্রায় ১১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রামে সাতটি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫০টি গ্রামে নদ-নদীর পানি ঢুকে পড়েছে।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড় গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান বলেন, ‘তার ইউনিয়নে ১০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। একটি বাঁধের কিছু অংশ ধসে গিয়েছিল, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলে আপাতত সেটি রক্ষা করেছে। দূরবর্তী চরবাসীদের নিরাপদ আনা হচ্ছে।’

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুটিরপাড় এলাকায় একটি রাস্তা ধসে যাওয়ায় তিস্তার পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চরবাসীরা রাস্তা ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ১০ হজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আজ সকালেও বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে অনেকে সরকারি রাস্তা ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। চরের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হচ্ছে।’

ব্রহ্মপুত্র নদে জেগে ওঠা শিবেরপাছি চরের বাসিন্দা সাহেদা বেওয়া (৬৩)। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হামার কষ্টের শ্যাষ নাই বাহে। হামার অ্যালা খালি কষ্ট আর কষ্ট। একবার বানোতভাসি থাকলোং ১২-১৩ দিন। ফির বান আসিল। বানভাসি হয়া হামরাগুলা কষ্টোত আছং। এমনি হামার কাম-কাজ নাই, তার উপরা বান আসিয়া হামাকগুলা কাঁন্দাবার নাগছে।’

আদিতমারী উপজেলা তিস্তাপাড় জর গোবর্ধানের কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ‘ঘরোত পানি, বাইরোত পানি। শুধু পানি আর পানি। হামরা কোনটে যামো। ঘর-বাড়ি ফ্যালে দিয়া গরু-ছাগল নিয়া হামরা রাস্তাত উঠছোং। হামার খাবার নাই। আন্দিবার না পাই, কী খাই। সাগাই সোদ্দর শুকনা খাবার দিবার নাইগছে সেইগলা খ্যায়া আছং।’

Comments

The Daily Star  | English

World Bank ready to be part of key economic reforms in Bangladesh: VP

The World Bank is 'excited' by the interim government's reform agenda and 'it is worth visiting Bangladesh right now', says Martin Raiser

18m ago