ভয়াবহ রূপ নিয়েছে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি
লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলাসহ ১০টি নদীর পানি ও কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দুই জেলার বন্যা পরিস্থিতি।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় দোয়ানিতে তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় রেড এলার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া ঘাট পয়েন্টে ৪৭ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি কৃড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অনবরত বৃষ্টি ও উজানে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তারা।
তিস্তা ব্যারেজে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ক্রমাগত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রোববার রাত সাড়ে ৯টায় ব্যারেজ এলাকায় রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে।’
‘ব্যারেজের আশেপাশে, উজানে ও ভাটিতে বসবাসরত পরিবারগুলোতে রাতেই নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘উজানে ভারত থেকে আসা পানির চাপ থেকে তিস্তা ব্যারেজকে সুরক্ষা রাখতে প্রয়োজনে ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস কেটে ফেলা লাগতে পারে।’
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডে ও জেলা প্রশাসন ডেইলি স্টারকে জানায়, নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নুতন নুতন এলাকা। লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ১২০টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ।
কুড়িগ্রাম জেলার সাতটি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের ২৫০টি গ্রামে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন আড়াই লাখ মানুষ।
চর, দ্বীপচর ও নদ-নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো থেকে পানিবন্দি মানুষজন তাদের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সরকারি রাস্তা ও বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছেন।
স্থানীয়রা ডেইলি স্টারকে জানান, এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
বৃষ্টির কারণে দুর্গত এলাকার বানভাসিরা বেশি কষ্টে পড়েছেন উল্লেখ করে তারা আরও জানান, তাদের মাঝে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
নদীপাড়ে কোথাও কোথাও লোকজন বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তারা।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজের পাশে গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় রোববার রাতে রেড এলার্ট জারি হলে রাতেই ব্যারেজের আশেপাশে, উজান ও ভাটতে বসবাসরত কয়েকশ পরিবারের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছে।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে বাঁধের কিছু অংশ। ঝুঁকিপুর্ণ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন জিও-ব্যাগ নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রয়োজনে এসব জিও-ব্যাগ ডাম্পিং করে বাঁধের ভাঙ্গন ঠেকানো হবে বলে জানান তিনি।
Comments