নেই বেসরকারি উদ্যোগ, ভরসা সরকারি ত্রাণ
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষকে সরকারি উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক বা বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও, চলতি বন্যা পরিস্থিতিতে দৃশ্যত নেই কোন বেসরকারি উদ্যোগ।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম কয়েক মাস বেসরকারি উদ্যোগে সহায়তা দেওয়া হলেও, বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে না কোনও বেসরকারি উদ্যোগ।
চলতি বন্যা পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জের সবকটি উপজেলায় ৮১টি গ্রাম এবং চারটি পৌরশহরের ২০টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়ে ৭০৩২০টি পরিবার বন্যাকবলিত হয় বলে জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্বে থাকা সহকারি কমিশনার জহিরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য জেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত ৮৫৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৩৯ লাখ টাকা ও প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য বিতরণ করেছে।
নতুন বরাদ্দ পাওয়া পাঁচ লাখ টাকা ও ২০০০ প্যাকেট শুকনো খাবারসহ আরও ৫৫ টন চাল এবং ১০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার শিগগির দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বেসরকারি উদ্যোগ না থাকলেও, সরকারি ত্রাণ সহায়তা এবার কিছুটা বেশি বলেও জানান তিনি।
জেলায় বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে গত মঙ্গলবার জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে ১০০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার মঞ্জুর।
সুনামগঞ্জ কৃষকলীগ জেলায় প্রায় তিন হাজার পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছে জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব বিন্দু তালুকদার বলেন, 'করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম থেকে সাধারণ মানুষদেরকে সহযোগিতা প্রদান করা হচেছ। এর মধ্যে বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ায় যতটা সম্ভব হচ্ছে সাংগঠনিক উদ্যোগে ত্রাণ বিতরন করা হচ্ছে।'
এ ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় ছোট পরিসরে কিছু সংগঠন থেকেও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জের গৌরারাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফুল মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর সরকারি সাহায্যের সঙ্গে বেসরকারি সাহায্য আসতো, যাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতো। তবে এবার বন্যায় কোন বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা আসছে না’।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে কী-না জানিনা, তবে, এ বছর বন্যায় আক্রান্তদের সহায়তায় বেসরকারি, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক তেমন কোন উদ্যোগ নেই’।
তিনি বলেন, ‘সরকার সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় সবাইকে আহবান জানিয়েছেন। আমি গতকাল (মঙ্গলবার) স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে তাদেরকে আহবান জানিয়েছি প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে’।
কোন ব্যক্তি বা সংগঠন চাইলে প্রশাসনের মাধ্যমে মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেন বলেও জানান তিনি।
এ দিকে সুনামগঞ্জের প্রধান নদীগুলোর পানি ধীরে ধীরে কমছে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে আজ বুধবার বিকেলে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয় অঞ্চলে পুনরায় সক্রিয় মৌসুমি বায়ু বিস্তারের সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে ২০ বা ২১ জুলাই থেকে আবার জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। ফলে, সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
Comments