করোনার প্রভাবে বিক্রি হতে যাচ্ছে শতাধিক স্কুল

নার্গিস আক্তারের জন্য সিদ্ধান্তটা নেওয়া ছিল খুবই কঠিন ও হৃদয়বিদারক। জমতে থাকা বেতন, ভাড়া আর বিলের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে স্কুলটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তার।

নার্গিস আক্তারের জন্য সিদ্ধান্তটা নেওয়া ছিল খুবই কঠিন ও হৃদয়বিদারক। জমতে থাকা বেতন, ভাড়া আর বিলের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে স্কুলটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তার।

গত চার মাস ধরে রাজধানীর মাটিকাটা এলাকার আইডিয়াল পাবলিক স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবক করোনা মহামারির কারণে টিউশন ও অন্যান্য ফি দিতে পারেননি। যার ফলে বন্ধ প্রতিষ্ঠানের আয়।

কিন্ডারগার্টেন স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার বলেন, ‘আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। করোনা মহামারি এক চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসেই জমতে জমতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খরচের বাকির পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে।’

যদি কোনো ক্রেতা পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে ১৫ বছরের পুরনো এই স্কুলটি ৩০০ শিক্ষার্থী এবং ২৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে।

হতাশা ব্যক্ত করে নার্গিস আক্তার জানান, এখন পর্যন্ত কেউই এটা কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি।

প্রতি মাসে স্কুলটির জন্য বাড়ি ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়। জুন পর্যন্ত তাদের বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।

করোনা মহামারির কারণে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পুনরায় কবে থেকে তা খোলার নির্দেশনা আসবে, তা অনিশ্চিত।

নার্গিস আক্তার জানান, কয়েক মাস আগেই স্কুলটি এমন একটি অবস্থায় এসেছে যে আয় ও ব্যয় সমান হয়েছিল। এর আগে তাও সম্ভব হয়নি। যার কারণে স্কুলের কোনো তহবিল নেই।

রাজধানী এবং আশেপাশের অনেক স্কুল মহামারির কারণে কঠিন সময় পার করছে। এসব স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষক তাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন এবং আর্থিক সমস্যায় দিন পার করছেন।

এই খাতে জড়িতরা বলছেন, গত কয়েক মাসে প্রায় শতাধিক স্কুল বিক্রি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সাভারের বাইপাইল এলাকার সৃজন সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজও তার মধ্যে একটি। এখানে আছেন প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী এবং ১৫ জন শিক্ষক।

স্কুলটির চেয়ারম্যান শামীম ইকবাল বলেন, ‘আমি এমন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। আমার শিক্ষার্থীদের কথা ভাবলে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু, আমি আর কী করতে পারি? এই স্কুলটি চালানোর জন্য আমার মাসে এক লাখ টাকা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি পাচ্ছি না একটি টাকাও।’

বসিলা এলাকার রাজধানী আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ও রয়েছে বিক্রির তালিকায়। এর পরিচালক ফারুক হোসেন রিপন জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিতে ১৭০ জন শিক্ষার্থী এবং ১৫ জন শিক্ষক রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার বকেয়া আমাকে পরিশোধ করতে হবে।’

২৫০ জন শিক্ষার্থী এবং ১২ জন শিক্ষক নিয়ে চলতে থাকা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফুলকুঁড়ি কিন্ডারগার্টেন ও উচ্চ বিদ্যালয়ও বিক্রি করা হবে। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের মাসিক ব্যয় প্রায় এক লাখ টাকা।

এটি বিক্রির জন্য গত এপ্রিলে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন এর পরিচালক তাকবীর আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘কেউ এখনও এটা কেনার জন্য প্রস্তাব দেয়নি ...।’

শিক্ষাবর্ষের মাঝামাঝি সময়ে স্কুলগুলো বিক্রি করতে দেওয়ায় কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে এর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এ বছর নভেম্বরে তাদের পাবলিক পরীক্ষায় বসার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, প্রায় প্রতিদিনই তারা খবর পান যে স্কুল বিক্রি করে দেবেন মালিকরা।

তিনি বলেন, ‘যতদূর আমরা জানি, প্রায় ১০০টি স্কুল বিক্রি করার জন্য চেষ্টা চলছে। যদি সরকার কোনো সহায়তা না দেয় এবং করোনা সংকট আরও বেশি দিন স্থায়ী হয়, তাহলে সারা দেশে আনুমানিক ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।’

কঠিন পরিস্থিতিতে পড়া এসব স্কুলের শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তা, মালিকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং ইউটিলিটি বিল মওকুফ করার দাবি করেছেন ইকবাল বাহার চৌধুরী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেনের কর্তৃপক্ষ আমাদের মাধ্যমে কোনো আর্থিক সহায়তা চায়নি। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। যদি কোনো কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষাবর্ষের মাঝামাঝি সময়ে হলেও বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে নেবে।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ জানান, কিন্ডারগার্টেন স্থায়ীভাবে বন্ধ ও বিক্রি হলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা শতভাগ ভর্তি ঝুঁকিতে পড়বে।

তিনি বলেন, ‘স্কুল ছেড়ে দেওয়া শিশুর সংখ্যা বাড়বে। কতগুলো কিন্ডারগার্টেন সংকটে রয়েছে তার হিসাব করা উচিত সরকারের। প্রয়োজনে তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া উচিত।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago