‘বাবার জন্মদিন উদযাপনের কোনো স্মৃতি নেই’

‘জন্মই হয়েছিল কাজের জন্য। তাই প্রতিটি দিন ছিল তার কাজের দিন, প্রতিটি দিন ছিল তার জন্মদিন। জন্মদিন কখনো উদযাপন করতে দেখিনি। তিনি বরাবরই যে কোনো আড়ম্বর অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতেন।’
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত

‘জন্মই হয়েছিল কাজের জন্য। তাই প্রতিটি দিন ছিল তার কাজের দিন, প্রতিটি দিন ছিল তার জন্মদিন। জন্মদিন কখনো উদযাপন করতে দেখিনি। তিনি বরাবরই যে কোনো আড়ম্বর অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতেন।’

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি।

তাজউদ্দীন আহমদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় জন্মদিন উদযাপন প্রসঙ্গে।

সিমিন বলেন, ‘আমি তো বাবাকে ওইভাবে কাছে পাইনি। স্বাধীনতার আগে বাবা ছিলেন ব্যস্ত। আর তাছাড়া জেলখাটা আর পালিয়ে বেড়ানোর কারণে খুব একটা কাছে পাইনি। আমার যখন সাড়ে চার বছর বয়স, তখন তিনি জেলে গেলেন। আর যখন সাত বছর বয়স তিনি ছাড়া পেলেন।’

‘তারপর ৬৯ এর গণঅভূত্থান, ৭০ এর নির্বাচন আর ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। বাবাকে তো দেখতেই পাইনি ঠিক মতো,’ বলছিলেন তিনি।

‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাবা নেমে পড়লেন দেশ গড়ার কাজে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। তার ব্যস্ততা আরও বেড়ে গেল।’

সিমিন বলেন, ‘আমার মনে বাবার জন্মদিন উদযাপন বা জন্মোৎসবের কোনো স্মৃতি নেই। আর তাছাড়া এমনও হয়েছে যে তিনি তার জন্মদিনের সময় বাড়ির বাইরে থেকেছেন অধিকাংশ সময়।’

বঙ্গতাজের কন্যা বলেন, ‘বাবা সারাজীবন কাজ করে গেছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে। বাবার জন্মদিনে চাওয়া, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজে যেন মেধাবী একটি প্রজন্ম গড়ে ওঠে। দেশপ্রেম জাগ্রত হয়ে যেন দেশের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে।’

একজন তাজউদ্দীন আহমদ

তাজউদ্দীন আহমদের জন্ম ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুরের কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে দরদরিয়া গ্রামে। বাবা মৌলভী মো. ইয়াসিন খান ও মা মেহেরুননেসা খানের চার ছেলে ও ছয় মেয়ে।

তাজউদ্দীন আহমদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। এরপর বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরের ভুলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলজীবন শেষ হয় ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে। ১৯৪৪ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৮ সালে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে নেন আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি।

১৯৪৩ সাল থেকে তিনি মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। মুসলিম লীগ সরকারের গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতির প্রতিবাদে তিনি এ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের (১৯৪৯) অন্যতম উদ্যোক্তা। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ববাংলা ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তাজউদ্দীন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনকালে গ্রেপ্তার হন এবং কারা নির্যাতন ভোগ করেন।

তিনি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন এবং পরে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৬৬ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে যান এবং প্রবাসী সরকার গঠনের চিন্তা করেন। ৪ এপ্রিল দিল্লীতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দীনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। ১০ এপ্রিল আগরতলায় সরকার গঠন করার উদ্যোগ নেন। এই সরকার স্বাধীন সার্বভৌম ‘গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’। স্বাধীনতার সনদ (Charter of Independence) বলে এই সরকারের কার্যকারিতা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দীন অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধকে সফল সমাপ্তির দিকে নিয়ে যেতে অসামান্য অবদান রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান তাজউদ্দীন। পরে ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ অন্য তিন জাতীয় নেতাকে।

আজ সেই মহান নেতার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন বাংলার তাজ, বঙ্গতাজ!

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago