মেকং নদী: যুক্তরাষ্ট্র-চীনের নতুন দ্বন্দ্ব

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নতুন দ্বন্দ্বক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং নদী। পরিবশেবিদ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রকল্পে অর্থ ব্যয় ও পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এর পাশ দিয়ে প্রবাহিত দেশগুলোর উপর প্রভাবে বিস্তারে ওয়াশিংটনকে পেছনে ফেলেছে বেইজিং।
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নতুন দ্বন্দ্বক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং নদী। পরিবশেবিদ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রকল্পে অর্থ ব্যয় ও পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এর পাশ দিয়ে প্রবাহিত দেশগুলোর উপর প্রভাবে বিস্তারে ওয়াশিংটনকে পেছনে ফেলেছে বেইজিং।

আজ শুক্রবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

রয়টার্স জানায়, ওবামা প্রশাসন মেকং নদীর নিম্নাঞ্চলের পরিবেশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচিতে যে তহবিল বরাদ্দ করেছিল, বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন চালু রাখলেও মেকংয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার কর্তৃত্ব হারাচ্ছে।

মেকং নদীর ওপর চীনের ১১টি বাঁধ ভাঁটিতে থাকা দেশগুলোর ক্ষতি করছে কি না এ নিয়ে আমেরিকা ও চীন সরকারের আলাদা আলাদা সাম্প্রতিক প্রতিবেদন দুই দেশের উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।

মেকং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। উজানে এর নাম ল্যানসাং। তিব্বতীয় মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে নদীটি লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। এসব দেশের কৃষি, মৎস্য, বিশেষ করে লাওসের জলবিদ্যুৎ এই নদীর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কিন্তু, চীনের দেওয়া ১১টি বাঁধ এই দেশগুলোতে নদীটির প্রবাহকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

এই অঞ্চলে চীন তার প্রভাব বাড়ানোর উপায় হিসাবে এই নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণকে কাজে লাগাতে পারে। পাশাপাশি, একে ঘিরে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে আমেরিকার গত এক দশকের অবস্থান ছিনিয়ে নিয়েছে চীন।

ব্যাংককভিত্তিক সংস্থা মেকং এনার্জি অ্যান্ড ইকোলজি নেটওয়ার্কের পরিচালক উইটুন পার্মপংসাচারন বলেন, ‘এটি অনেকটা আমেরিকা ও চীনের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের মতো ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে।’

এই অঞ্চলের এক আমেরিকান রাষ্ট্রদূত চীনকে এই নদীর পানির ‘মজুতদার’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘৪ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার নদীর উজানে চীনের ১১টি বাঁধ ভাটির অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

ভিয়েতনাম অংশে মেকং নদীর বর্তমান অবস্থা সে দেশের ছয় কোটি কৃষক ও জেলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের খরা এখানে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নদীর পানির স্তর কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল এবং বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এখানে কম ও তুলনামূলক ছোট মাছ ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে।

মেকং নদী নিয়ে সম্প্রতি গঠিত আন্তঃসরকার সংস্থা ল্যানসাং মেকং কো-অপারেশন গ্রুপ (এলএমসি) এর মাধ্যমে চীন বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে। পাশাপাশি ২৫ বছরের পুরনো সংস্থা মেকং নদী কমিশনকে (এমআরসি) ‘বসিয়ে’ দেওয়া হয়েছে বলে এই অঞ্চলে আমেরিকার আরেক রাষ্ট্রদূত নিন্দা জানিয়েছেন।

মেকং নদী কমিশন লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম সরকারের সঙ্গে নদী ও নদীর সম্পদের অংশীদারিত্ব ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে আমেরিকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্যোগ গ্রহণ করার সময় থেকে এ কমিশনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়টার্সকে জানিয়েছে, বেইজিং মেকং দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে- আমেরিকার এমন মন্তব্য ভিত্তিহীন।

মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, এই অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোর নতুন ঝামেলা শুরু করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago