কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, উন্নতি লালমনিরহাটে

ছবি: এস দিলীপ রায়

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদ, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কোন উন্নতি নেই বন্যা পরিস্থিতির। তবে, লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকায় উন্নতি হচ্ছে এখানকার বন্যা পরিস্থিতির। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট ও স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন দুই জেলার চার লক্ষাধিক বানভাসি মানুষ।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদীর পানির বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানিতে কমতে শুরু করেছে।’

আগামী কয়েকদিনে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর শংকর মাধবপুরের পানিবন্দি সহিদার রহমান (৫৬) জানান, তারা গেল এক মাসের বেশি সময় ধরে বানের পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। এখনো তাদের বাড়ি-ঘরে পানি থৈথৈ করছে। একদিনের জন্য কিছুটা পানি নেমে গেলেও পরের দিন আবার পানি বেড়ে যায়। বাড়ি ছেড়ে তারা গবাদি পশু-পাখি নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। মাঝে মাঝে নৌকা অথবা কলার ভুড়ায় চড়ে বাড়িতে আসে খোঁজ-খবর রাখার জন্য। এ পর্যন্ত সরকারি ১০ কেজি চাল ছাড়া কিছু পাননি।

একটি ছাগল আড়াই হাজার টাকা বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

একই উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চর মোহনগঞ্জের বানভাসি আতাউর রহমান (৬৫) জানান, এখনো তাদের বাড়ি-ঘর বানের পানিতে তলিয়ে আছে। এ বছর বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় তারা অপূরণীয় ক্ষতিতে পড়েছেন। আত্মীয়-স্বজনের সহায়তা নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন।

কবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নেমে যাবে বাড়ি-ঘর থেকে আর কবে বাড়িতে ফিরবে এই দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন ব্রহ্মপুত্রপাড়ের মানুষ জানান তিনি।

চর রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রপাড়ের কোদালকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের পুরোটাই ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে তলিয়ে আছে। কোনো কোনো স্থান থেকে পানি নামলেও অধিকাংশ এলাকায় বানের পানি থৈথৈ করছে। বানভাসি মানুষের সাহায্যে যে পরিমাণে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। অধিকাংশ বানভাসি মানুষকে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম ফজলুল হক মন্ডল বলেন, ‘সরকারি ত্রাণ সহায়তা খুবই অপ্রতুল হওয়ায় অধিকাংশ বানভাসি মানুষকে এখনো ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বানভাসিরা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।’

চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তালেব বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বানভাসিরা এখনো বাড়িঘর ছেড়ে সরকারি রাস্তা, বাঁধ ও রেললাইনের উপর অস্থায়ী আশ্রয়ে বাস করছেন। বাড়িঘর দীর্ঘদিন বানের পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

বানভাসিরা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সংকটসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা জটিলতা নিয়ে বেঁচে আছেন বলে তিনি জানান।

‘ঈদের আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বানভাসিদের ভিজিএফ (ভালনেরাবেল গ্রুপ ফিডিং)-এর চাল বিতরণ করতে তাদের উপর সরকারি নির্দেশনা আছে,’ বলেন তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘বানভাসিদের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে নগদ এক কোটি টাকা ও ত্রিশ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার চেয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। এ বরাদ্দ পেলে তা দ্রুত বানভাসিদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Fuel prices cut

Fuel prices cut by Tk 1 per litre

Tk 104 for diesel and kerosene, Tk 121 for petrol, and Tk 125 for octane

26m ago