প্রবাসীদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিবন্ধন জরুরি কেন
বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে প্রায় এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী জীবিকার প্রয়োজনে কর্মরত আছেন। এসব বাংলাদেশিরা কর্মক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ছাপ রেখে চলেছেন। তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত রেমিট্যান্স (বৈদেশিক মুদ্রা) দেশের উন্নয়ন, তথা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
প্রবাসী কর্মীদের অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের এবং দেশে-বিদেশে কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য কিংবা উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, তথা সার্বিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ইমিগ্রেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৮২ এর ১৯(১) ধারা অনুযায়ী সরকার ১৯৯০ সালে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল’ গঠন করে। ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৮’ এর মাধ্যমে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। (সূত্র— ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইট)
যদিও সরকার সব কিছুতেই ‘ডিজিটাল’ বলে দাবি করে, তবে এই এক কোটিরও বেশি সংখ্যক প্রবাসীর কত শতাংশ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মোট সদস্য, তার সঠিক হিসাব স্বয়ং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলো ঘেঁটেও পাওয়া যায়নি।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়া ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অধিকাংশ প্রবাসীর ধারণা স্পষ্ট নয়।
১৯৮৫ সাল থেকে জাপানে বসবাস করছি। আমার নিজেরও বিষয়টি জানা ছিল না। অস্বচ্ছ একটা ধারণা জন্মেছে জাপান প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাকের সদস্য প্রাপ্তির পর। এরপর জাপানের বাংলাদেশ দূতাবাসে শ্রম বিভাগ চালু হলে বর্তমানে সেখানে কাউন্সেলর হিসেবে কর্মরত মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন। ২০১৯ সালে আমি সস্ত্রীক সদস্য পদ গ্রহণ করতে সক্ষম হই।
দূতাবাস কাউন্সেলর (শ্রম) মো. জাকির হোসেন জানান, বর্তমানে জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। আর সব মিলিয়ে জাপানের প্রবাসীদের মধ্যে তিন শ জন ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য।
জাপান থেকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য কম হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, জাপানে বাংলাদেশিরা বৈধ হলেও কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে তেমন সাড়া পাওয়ার পেছনে প্রবাসীদের অধিকাংশই অনলাইনে ফরম পূরণ করাকে জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ বলে মনে করেন। এ ছাড়া, নানা ধরনের তথ্য, কোম্পানির তথ্য ইত্যাদি প্রদানে রয়েছে সংকোচ ও দ্বিধাবোধ। এইগুলোই এর অন্যতম কারণ।
সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এই কাউন্সিলর জানান, অনলাইনে ফরম পূরণকে জটিল মনে করলে দূতাবাসে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দূতাবাস প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে।
জাপানের প্রবাসী বাংলাদেশিরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে নিবন্ধনের জন্যে www.wewb.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ফরম পূরণ করে পাঁচ হাজার ইয়েনের ব্যাংক ড্রাফটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দিতে হবে। কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে দুই কপি ছবি, পাসপোর্ট কপি ও ভিসা কপি। আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় যাচাই ও প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর নিবন্ধন কার্যকর হবে।
বর্তমানে জাপানে বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব জটিল আকার ধারণ করায় প্রবাসীরা ডাকযোগেও আবেদন করতে পারবেন।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হলে কী সুবিধা?
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য পদ গ্রহণকারী প্রবাসীরা তাদের মেধাবী সন্তানদের জন্য প্রতিবছর বোর্ড থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাবেন, প্রবাসীদের সন্তানরা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবাসী কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবে, প্রবাসে মৃত্যু হলে মরদেহ দেশে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যাবে, মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় বিমানবন্দরে মরদেহ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য পাবে, প্রবাসে মৃত্যু হলে মৃত কর্মীর নমিনি বা পরিবারকে তিন লাখ টাকা আর্থিক অনুদান, পুনর্বাসন ঋণসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, প্রবাসী কর্মী এবং তাদের পরিবারের সুরক্ষা ও মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া, তাদের আস্থা অর্জন, মৃত কর্মীদের মরদেহ দেশে আনা, ব্যয় নির্বাহ এবং এ সংক্রান্ত কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের ৯ জুলাই ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিল ২০১৮’ আইন পাস করা হয়।
Comments