জলবায়ু তহবিলের প্রকল্প

১০ কোটি টাকার সড়ক ২ বছরেই নদীতে বিলীন

পটুয়াখালীর দশমিনায় জলবায়ু তহবিলের আওতায় নির্মিত একটি পাকা সড়ক দুই বছরের মাথায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গছানী বাজার থেকে হাজির হাট পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির দেড় কিলোমিটার ইতোমধ্যেই তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এতে করে পাঁচ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার হাজিরহাটে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে সড়কের একাংশ। ছবি: সোহরাব হোসেন

পটুয়াখালীর দশমিনায় জলবায়ু তহবিলের আওতায় নির্মিত একটি পাকা সড়ক দুই বছরের মাথায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গছানী বাজার থেকে হাজির হাট পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির দেড় কিলোমিটার ইতোমধ্যেই তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এতে করে পাঁচ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে।   

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরুর সময় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলেও আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

দশমিনা উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানায়, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ব জলবায়ু তহবিলের প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গছানী বাজার থেকে দশমিনা ইউনিয়নের হাজিরহাট পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার পাকা করা হয়। কোস্টাল ক্লাইমেট রেজিরিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিসিআরআইপি) প্রকল্পের অধীনে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

কেদির হাট এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম জানান, সড়কটি নির্মাণের ফলে আমরা দশমিনা শহরে সহজেই যেতে পারতাম। কিন্তু সড়কটি নদীতে ধসে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল গত ৩ মাস ধরে বন্ধ। কেদির হাট, কাউনিয়া ও হাজির হাট এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। যে কোন সময় এ সড়কটি পুরো ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা জলবায়ু ফোরামের সভাপতি রায়হান বাদল জানান, নদীটি এমনিতেই খরস্রোতা আর প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা না করেই সড়কটি নির্মাণ করায় মাত্র দুবছরেই সড়কটি ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল।

অপরিকল্পিতভাবে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালের মে মাসে দশমিনা এলজিইডি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ আমলে নেয়নি।’

একই কথা জানান দশমিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ লিটন। তিনি বলেন, ‘সড়কটি নদীর তীর ঘেঁষে নির্মাণ না করার জন্য এলজিইডিকে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তারা সে কথা শোনেনি। সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি এখন এলাকাবাসীর কাজে আসছে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘ওই সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়িবাঁধ ছিল। পরে সেখানে এলজিইডি পাকা সড়ক নির্মাণ করে। তবে যেহেতু এটি সম্পুর্ণ বিধস্ত হলে ওই এলাকার কৃষিজমি জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে বাঁধটি মেরামতের উদ্যোগ নেব। তবে সড়কটি এলজিইডি সংস্কার করবে।’

সড়কটির নির্মাণকালীন উপজেলা প্রকৌশলী (বর্তমানে শরিয়তপুর সদর উপজেলায় কর্মরত) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সড়কটি নির্মাণের জন্য ২০১২ সালে একটি সমীক্ষা করা হয় এবং সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ওই সময়ে নদীটি প্রকল্প স্থান থেকে ৩০০ মিটারেরও বেশি দূরে ছিল। পরবর্তীতে সড়কটি নদী ভাঙনের মুখে পড়ে এবং এর একাংশ ভেঙ্গে যায়। এটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে দাবি করেন তিনি।

ওই সময়ে স্থানীয় লোকজন তাদের জমি দিতে রাজি না হওয়ায় নদী থেকে আরও দূরত্ব রেখে সড়কটি নির্মাণ করা যায়নি। এটি করতে পারলে এতো কম সময়ে সড়কটি ভাঙনের মুখে পড়তো না, জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
EC turns a blind eye to polls code violations

Nomination submission deadline won’t be extended: EC

The deadline for the submission of nomination papers ended at 4:00pm today

39m ago