১৩ লাখ টাকার করোনা সুরক্ষাসামগ্রীর তালিকা থাকলেও, বাস্তবে না থাকার অভিযোগ
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের জন্য করোনা সুরক্ষা সামগ্রী কেনা হলেও সেগুলো না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পরিষদের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে কেউ কোন সুরক্ষা সামগ্রী পাননি বলে অভিযোগ করলেও, আখাউড়া উপজেলা পরিষদ গত তিন মাসে এসব সামগ্রী কেনায় খরচ দেখিয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে পরিষদের ফান্ড পরিচালিত হয় বলে তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে।
ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনার দাবি, উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে তিনি এ টাকা ব্যয় করেছেন।
একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন বিশিষ্ট এই উপজেলায় ১৩ লাখ টাকার করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় এবং বিতরণের একটি তালিকা দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।
তালিকায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫ টাকার বিভিন্ন সামগ্রী কেনা হয়েছে। উপজেলা উন্নয়ন তহবিল থেকে নেওয়া এই টাকার মধ্যে দেড় লাখ টাকায় পাঁচ ধরনের মাস্ক কেনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৬টি বেসিন স্থাপন, এক লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকায় ছয় ধরনের গ্লাভস, ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় ৬০ পিস পিপিই, ৭৮ হাজার ৬০০ টাকায় চার ধরনের স্যানিটাইজার, ৩১ হাজার ৫০০ টাকায় ৯০ পিস গগলস ও ১৮ হাজার টাকায় ৩০০ পিস ক্যাপ কেনার কথা উল্লেখ আছে।
এছাড়া সু-কাভার, ফেস কাভার, গাম বুট, এপ্রোন, রেইন কোট, হ্যান্ড স্প্রে, হাসপাতালে ব্যবহার্য ভ্যাকুয়াম টিউব, ওটি গাউন, থার্মোমিটার, স্প্রে মেশিন কেনার খরচ বাবদ দেখানো হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা (১,৪৯,৪৫০ টাকা)।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আখাউড়ায় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগে গত ১৩ মার্চ সুরক্ষা সামগ্রী কেনার তালিকা করা হয়। ১৫ মার্চ এতে স্বাক্ষর করেন ইউএনও। গত ৯ এপ্রিল আখাউড়া উপজেলায় প্রথম করোনা উপসর্গ থাকা রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে ছোট এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে ব্যবহার উপযোগী ১৫টি বেসিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
এই উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘ইউএনও আমাকে কিছু ব্লিচিং পাউডার দিয়েছেন। এছাড়া আর অন্য কিছু পাইনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তারা কোনো সুরক্ষা সামগ্রী পাননি।
উপজেলার এলজিইডির সার্ভেয়ার জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘এত টাকার সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের তালিকা দেখলাম, কিন্তু আমি নিজে কিছু পাইনি।’
আখাউড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মমিন বাবুল বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ কোথায় এত এত সামগ্রী বিতরণ করেছেন তা আমরা জানতে পারিনি। করোনাকালীন শ্রমিক সংকটের কারণে স্থানীয় কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। তারাও এসব সামগ্রী পাননি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূঁইয়া বিল ভাউচার ঠিক না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘চক্ষু লজ্জায় এই বিলে স্বাক্ষর করেছি। আমি বলেছিলাম চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করতে। কিন্তু ইউএনও ইচ্ছেমতো এতগুলো টাকা খরচ করেছেন।’
জানতে চাইলে ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা বলেন, ‘পুরো উপজেলার সাধারণ মানুষের জন্য এসব সুরক্ষা সামগ্রী কেনা হয়েছে এবং বিতরণও করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি সব বিধি-বিধান মেনে এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে এবং এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এসবের ডকুমেন্টস আমাদের কাছে আছে। এখানে অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়।’
Comments