কাজ হারাচ্ছেন স্বর্ণকারেরা, পেশা বদল করছেন অনেকে

কয়েক দিন পরই ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের বিপণী বিতানগুলোতে নগরবাসীর আনাগোনা থাকলেও, স্বর্ণের দোকানগুলোতে নেই কোন ব্যস্ততা বা ভিড়।
নারায়ণগঞ্জ শহরের মিনাবাজার এলাকায় গহনা তৈরির কারাখানায় একজন কাজ করলেও, কাজ না থাকায় বসে থাকতে হচ্ছে দুই স্বর্ণকারকে। ছবি: সনদ সাহা

কয়েক দিন পরই ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের বিপণী বিতানগুলোতে নগরবাসীর আনাগোনা থাকলেও, স্বর্ণের দোকানগুলোতে নেই কোন ব্যস্ততা বা ভিড়। 

গতকাল রবিবার বিকেলে শহরের মিনাবাজার এলাকায় স্বর্ণের মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় অনেক দোকানই বন্ধ। দু-একজনকে কাজ করতে দেখা গেলেও, অনেককেই কাজ ছাড়াই বসে থাকতে দেখা যায়। 

অঞ্জনা স্বর্ণ শিল্পালয়ের স্বর্ণকার আকাশ দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে স্বর্ণের দাম যখন বাড়তে শুরু করেছিল, তখন থেকেই কাজ কমে আসে। আর মার্চে সরকার লকডাউন ঘোষণার পর দুই মাস দোকান বন্ধ ছিল। তখন মুন্সিগঞ্জে বাড়িতে চলে যাই। সেখানে কখনো কৃষি কাজ, কখনো মাটি কাটার কাজ করে সংসার চালিয়েছি। এখন এসেছি কোরবানি ঈদে হয়তো কাজ পাবো এই আশায়। কিন্তু কাজ নেই। যে দুই-এক ভরির কাজ করছি, তাতে এখানে আমার খাওয়ার খরচও হচ্ছে না। ধার করে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হচ্ছে।’

আকাশ দাস আরও বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন টিকতে পারবো জানি না।’

স্বর্ণকার মন্টু দাস বলেন, ‘এক ভরি স্বর্ণের গহনা বানালে চার হাজার টাকা মজুরি পাই। লকডাউনের আগে জানুয়ারি পর্যন্ত দুই জনে মাসে ১০ থেকে ১২ ভরি পর্যন্ত কাজ করেছি। আর জুলাই মাসে এসে তিন ভরির কাজও পাইনি।’

অঞ্জনা স্বর্ণ শিল্পালয়ের স্বর্ণকার ও পরিচালক প্রদীপ দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা পাঁচ জন কারিগর এক সঙ্গে কাজ করতাম। এখন তিন জন আছি। দুই জনের একজন অটোরিকশা চালায়, আরেকজন কাঁচা সবজি বিক্রি করছে। এভাবে চলতে থাকলে দোকান বন্ধ করে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি ও করোনার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ। তাই কেউ গহনা বানাতে দিচ্ছে না। আর যারা দিচ্ছেন সেটাও ১০ ভরির জায়গায় মাত্র দুই থেকে তিন ভরি। এ কাজ করে তো সংসার চালাতে পারবো না।’

মিনাবাজার কারিগর স্বর্ণ শিল্পালয় সমিতির সভাপতি নূর মোহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহরে চার শতাধিক স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে দেড় হাজারের বেশি স্বর্ণকার কাজ করেন। ঈদের সময় এসব স্বর্ণকার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অলংকার তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও, এবার সবাই একেবারেই বেকার। অনেক কারিগর পেশা বদলে ফেলেছে। আমার পরিচিত আট থেকে ১০ জন এখন অটোরিকশা চালাচ্ছে, কাঁচা সবজি বিক্রি করছে কিংবা গার্মেন্টসে যোগ দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর অর্ধেকের বেশি কারিগরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি স্বর্ণকারদের জীবনে গত ৩০ বছরেও আসেনি। সবার আয় রোজগার বন্ধ। কারো কাছ থেকে কোন সহায়তা আমরা পাইনি।

মিনাবাজারের মৃধা অলংকার প্লাজা স্বর্ণের মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, ৩০ থেকে ৩৫টি দোকান থাকলেও, একটিতেও ক্রেতা নেই। 

খন্দকার জুয়েলার্স এর পরিচালক লিটন খন্দকার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ‘গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৫৯ হাজার, ২১ ক্যারেট ৫৬ হাজার ও ১৮ ক্যারেট ৫১ হাজার। কিন্তু কয়েক দফায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি দাম বাড়িয়েছে। বর্তমানে ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম সাড়ে ৭২ হাজার, ২১ ক্যারেট সাড়ে ৬৯ হাজার ও ১৮ ক্যারেট ৬০ হাজার ৫০০ এবং সনাতন ৫০ হাজার ৫০০ টাকা।

লিটন খন্দকার বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি, করোনা ও বন্যার জন্য বেচাকেনা নেই। যেখানে মাসে ৩০ ভরি স্বর্ণ বিক্রি হতো সেখানে বর্তমানে শূন্যের কোঠায়। মূলত এখন কেউ স্বর্ণ কিনতে আসে না। বিক্রি করছে বেশি। আজকেও স্বর্ণ কিনেছি। কারণ অনেকেরই কাজ নেই। তারা তাদের স্বর্ণ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দাম বেশি হলেও বিয়ে বা অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্বর্ণ কিনতে আসতো। কিন্তু, সেগুলোও বন্ধ। তাছাড়া, যারা শখে কিনতেন, তাদেরকেও এখন দেখা যায় না।

লিটন খন্দকার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গেই স্বর্ণের দাম ওঠানামা করে। তাই কবে স্বর্ণের দাম স্বাভাবিক হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। আমরা চাই স্বর্ণের দাম কমে আসুক। তবেই আমাদের বেচাকেনা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
PM visit to India

Hasina likely to kick off AL campaign with Sylhet rally on Dec 20: Quader

Prime Minister Sheikh Hasina, also the president of the ruling Awami League, will formally kick off the election campaign of the ruling party from a rally in Sylhet likely to be held on December 20.

1h ago