প্রবাসে

করোনাকালে আমাদের করুণ, নিদারুণ ‘এইসব দিনরাত্রি’

ফেব্রুয়ারির কোন এক সময় থেকেই মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমরা প্রথম জানতে পারি, করোনার মতো একটা ভাইরাসের সাথে অবিরাম যুদ্ধ করছে চীন। আমাদের প্রতিদিন মন খারাপ হতে থাকে কিন্তু ভয়াবহতা তখনও পুরো বিশ্ব সেভাবে টের পায়নি।
ছবি: নাদেরা সুলতানা নদী

ফেব্রুয়ারির কোন এক সময় থেকেই মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমরা প্রথম জানতে পারি, করোনার মতো একটা ভাইরাসের সাথে অবিরাম যুদ্ধ করছে চীন। আমাদের প্রতিদিন মন খারাপ হতে থাকে কিন্তু ভয়াবহতা তখনও পুরো বিশ্ব সেভাবে টের পায়নি।

মার্চের শুরু থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের খন্ডচিত্র, প্রতিটি দিন, সকাল উঠে আসতে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে। বুঝতে না বুঝতেই চোখের সামনে প্রেক্ষাপট বদলাতে থাকে।  

একদম শুরু থেকে আজ এই সময়ের কিছু অনুভব শেয়ার করছি আমার অভিজ্ঞতায়।

একটু বলে নিই, মানুষ হিসেবে কিছু সময় আমি খুব নির্লিপ্ত টাইপের। প্রাকৃতিক কোন বিপদে খুব ভয় পেয়ে যাওয়াটা কেন যেন নেই আমার ধাঁতে। মরে যাচ্ছি এখনই, এমন অবস্থা হলে নিজের প্রিয় মুখগুলোকে মিস করতে করতে একটু অসহায় যে লাগে না তা অস্বীকার করছি না! তবে ওইটুকুই, ভয় পেয়ে গুটিয়ে যাই না।

মার্চের শুরু থেকে করোনা' আতঙ্ক চতুর্দিক থেকে উঠে আসে। আমি আমার কাজ, সংসার, একান্ত জগত নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম, লম্বা সময় ধরে এই আতঙ্ক নিয়ে যে বসে থাকব সেই উপায়ও ছিল না।

শুরুতে অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থা ভয়াবহ না হলেও আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে জানলাম, চিকিৎসা হচ্ছিল। তবে মিডিয়ার বরাতে যে খবর বারবার উঠে আসছিল তা হচ্ছে, কিছু প্রোডাক্ট ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে পুরো অস্ট্রেলিয়ায়।

অস্ট্রেলিয়ার বাইরের আত্মীয় পরিজন, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে ফোনে কথা হলে বা ইনবক্সে অনেকেই জানতে চান, কেমন আছি, টিস্যু আছে কিনা আমার বাসায় পর্যাপ্ত?

আসলে অনেকের মতো আমি ও আমার পরিবার দুই/তিন বেলা যেমন খাবারের চাহিদা, ঠিক তেমন লাইফ স্টাইলের সাথে সব রকমের টিস্যুর চাহিদা জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। মাসে স্বাভাবিকভাবে যা লাগে অল্প কিছু বেশিই কেনা থাকে। সে মাসেও তাই ছিল তাই বাড়তি কিনে আনার প্রয়োজন বোধ করিনি।

এর মাঝেই দেখলাম, চলতি সপ্তাহ না হলেও আগামী সপ্তাহে লাগবেই। একটা সুপার স্টোরে পার্ট টাইম কাজ করি উইকেন্ডে, তাই ভাবছিলাম যখন যাব, নিয়ে আসবো।

এর আগে খেয়াল করিনি, হঠাৎ স্টোরে ঢুকে দেখি টিস্যু এবং সব রকমের ক্লিনিং প্রোডাক্ট প্লেস একদম ফকফকা। মনটা একটু খারাপ হলো।

এর আগের শুক্রবার অফিসেও এইচ আর থেকে ইমেইলে প্রথমবারের মতো সতর্কবিধি এসেছে। ওটা পড়ে যখন আমি আমার টিমকে শেয়ার করতে গেছি, টিমের সবার মুখে ছিল মিশ্র অনুভূতি। না প্যানিক কেউই না। একজন তো বলেই ফেললো,  ‘স্যরি নাদেরা, খুব ব্যস্ত এই মুহূর্তে 'করোনা' নিয়ে পড়ার সময় নেই, পরে পড়ছি।’ ওকে নিয়ে বাকি সবাই একটু হালকা রসিকতাও করলাম। বললাম, হায় বাস্তবতা, কারো কারো মরারও সময় নেই!

অফিস শেষে চলে আসার সময় উইকেন্ডে সবাই যেভাবে হাগ দিই, এই নিয়েও তুমুল মজাই করলো সবাই, ‘নো হাগ, ওয়ান মিটার ডিস্টেন্স প্লিজ।’

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ, কাজ শেষে, স্টোর থেকে এক প্যাকেট টয়লেট (২৪) রোল আর তিন প্যাক পেপার টাওয়েল নিয়ে এলাম। রাত ১০টা, স্টোর বন্ধ হয়ে গেছে, জিনিসপত্র নিয়ে পার্কিংয়ে হাঁটছি। আমার আশেপাশে থাকা দুই চার জন ক্রেতা এমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে এই প্রথম আতঙ্কিত হলাম। এক কিশোর দেখি উল্টো দিক থেকে দৌড়ে আসছে। নাহ ও আমার দিকে তেড়ে আসছে না, স্টোর বন্ধ হয়ে গেছে কিনা তাই জানতে চাইছে।

গাড়িতে ওঠার আগে কিছুটা বিধ্বস্ত তারপরও মনে হল এই অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করব সময় পেলেই।

পরবাসে থাকা করোনা কালের দুঃস্বপ্ন, হতাশা এবং আশা জাগানিয়া টুকরো সময়গুলো নিয়ে আবার ফিরবো বেঁচে থাকলে।

(মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া থেকে)

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago