বন্যায় সাভার-আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল প্লাবিত

গত প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা। সাভার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে।
ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ

গত প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা। সাভার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে।

রাস্তা, ব্রিজ, বাজার, কৃষি জমি, বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এই অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। এ ছাড়া ধামরাই উপজেলাতেও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় নলকূপ তলিয়ে যাওয়াও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে অনেককেই।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ঢাকার উত্তরাঞ্চল বেষ্টিত তুরাগ, বংশী ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর এই তিন নদীর পার্শ্ববর্তী সাভার ও ধামরাইয়ের ২৮টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ২০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

বুধবার সাভারের ধামসোনা, শিমুলিয়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের বেশ কিছু দুর্গত এলাকা ঘুরে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।

পানিবন্দী লোকজন বলছেন, একদিকে মহামারি অন্যদিকে বন্যায় উপার্জন বন্ধ হয়ে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে রয়েছেন তারা। পানিতে বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় অন্যত্র কোনোমতে দিনাতিপাত করছেন তারা। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তারা এখনো ত্রাণ পাননি।

ধামসোনা ইউনিয়নের পশ্চিম বাইপাইল এলাকার গরু খামারি আবু সায়েদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্যায় তার বাড়ি ও গরুর খামারে পানি উঠেছে। ৪২টি গরু নিয়ে তিনি বিপাকে রয়েছেন। ৩২ গরু নিয়ে নিজের একতলা বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়েছেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১০টি গরু ভাইয়ের বাসায় পাঠিয়েছেন।

আবু সায়েদ বলেন, বন্যার কারণে চলাচলের অসুবিধা হলেও আমাদের খাবারের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সমস্যায় পড়েছি আমার গরুদের নিয়ে। গরুর ঘাস, খড় সব নষ্ট হয়ে গেছে। নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্য বাসা থেকে পানি খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

কাইচাবাড়ির এলাকার ভ্যানচালক রহিম মিয়া জানান, তার ভাড়া বাড়িতে পানি উঠেছে। তাই পোশাক শ্রমিক স্ত্রীকে নিয়ে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে বসবাস করছেন। বন্যায় কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি তিনি।

সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্যায় আমার নির্বাচনী এলাকার অর্ধেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ সহযোগিতা দরকার। আমরা ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে ত্রাণের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছি।

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাভার ও ধামরাইয়ের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ দেওয়া হবে। আমরা যতটুকু ত্রাণ পাব তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।

বিষাক্ত কালো পানিতে বন্দী জীবন

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকায় বন্যার পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। পানির রঙ পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কলকারখানার বর্জ্য ও শিল্পাঞ্চলে নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় যত্রতত্র বর্জ্য ফেলাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ

আশুলিয়ার পশ্চিম বাইপাইল এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার পানি স্বচ্ছ থাকার কথা। কিন্তু আমাদের এলাকায় পনির রং কালো। পানি থেকে দুর্গন্ধ আসছে। বিষাক্ত কালো পানিতে আমরা বন্দী হয়ে পড়েছি।’

পানির রঙ বদলের কারণ ব্যাখ্যা করে একই এলাকার রিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি নয়নজুলি খালের পাশে। এই খাল দিয়ে শতাধিক কারখানার বর্জ্য প্রবাহিত হয়। খালটিতে যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে পানি কালো হয়ে গেছে। এই পানিতে চলাফেরা করলে পায়ে ক্ষত তৈরি হয়।’

মহিবুল ইসলাম নামে এক কলেজ ছাত্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই শিল্পাঞ্চলে হাজারের বেশি কলকারখানা আছে। লোক বসবাস করে দশ লাখের ওপরে। তবু পরিকল্পিত কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই এখানে।

বিষাক্ত বর্জ্য বন্যার পানিতে মিশে ডায়রিয়া, আমাশা, টাইফয়েড ও জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইসএফপিও) ডা. সায়েমুল হুদা। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সব দিক বিবেচনা করে বিবেচনা করে আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করেছি। পাশাপাশি আমরা এলাকাবাসীর মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার স্যালাইন সরবরাহ করছি।’

এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সমস্যাগুলো নিয়ে এলাকাবাসী আমাদের বরাবর আবেদন করলে আমরা ইউএনও, এসি (ল্যান্ড) ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাঠাব।

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago