করোনা ভ্যাকসিন: মানবদেহে প্রথম ধাপের পরীক্ষায় সাফল্যের দাবি নোভাভ্যাক্সের
মানবদেহে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষায় সাফল্যের দাবি করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান নোভাভ্যাক্স। ১৩১ জন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের পর এর ফল প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সিএনএন জানায়, মঙ্গলবার, স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে দুই ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে বলে রিপোর্টে জানিয়েছে নোভাভ্যাক্স।
সাধারণত কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠাদের শরীরে যে পরিমাণ নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন তার চার গুণ বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম বলে জানানো হয়েছে।
নোভাভ্যাক্সের প্রেসিডেন্ট ডা. গ্রেগরি গ্লেন বলেন, ‘এটা বেশ ভালো খবর। সত্যিই আশাব্যঞ্জক।’
নোভাভ্যাক্সের তৈরি ভ্যাকসিন টি-সেল থেকে রেসপন্স তৈরি করতেও সক্ষম, যা মূলত বিশেষ প্রতিরোধী কোষ হিসেবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। ১৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে টি-সেল প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ওই গবেষণাসংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশের জন্য জমা দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত নোভাভ্যাক্সের বাইরে কোনো বিজ্ঞানী এটি নিয়ে পর্যালোচনা করেননি।
প্রথম ধাপের পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবীদের দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। পাশাপাশি, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে অনেককে ‘অ্যাডজুভান্ট’ নামের একটি উপাদান দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষায় ১২৬ জনের মধ্যে পাঁচ জনের শরীরে মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও হালকা জ্বরের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গড়ে সর্বোচ্চ দুই দিন পর্যন্ত ছিল।
গতকাল প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল জানানোর পাশাপাশি প্রাণীদেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষার ফলও জানিয়েছে নোভাভ্যাক্স। ১২টি বানরের শরীরে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সেগুলোকে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত করা হয়। দেখা গেছে, ১১টি বানরের শরীরে সংক্রমণের কোনো উপসর্গ নেই। অল্প ডোজ পাওয়া একটি বানরের ফুসফুসে সংক্রমণের সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও তা কেবল দুই দিন স্থায়ী হয়।
নোভাভ্যাক্স ছাড়াও ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিনের মানবদেহে প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে আরও দুটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান- মডার্না ও ফাইজার। তাদের প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফলও ইতিবাচক ছিল। গত সপ্তাহে মডার্না ও ফাইজার ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করে।
জরুরি ভিত্তিতে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির জন্য মার্কিন সরকারের ‘অপারেশন র্যাপ স্পিড’ কর্মসূচির অধীনে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নোভাভ্যাক্স, মডার্না, ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও গ্লাস্কোস্মিথক্লাইন।
‘অপারেশন র্যাপ স্পিড’ কর্মসূচির প্রধান মনসেফ স্লাউয়ি জানান, আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারি নাগাদ উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা মার্কিন নাগরিকদের জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্য হবে বলে আশাবাদী তিনি। ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় থাকবে বলে আশা করছেন স্লাউয়ি।
Comments