সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ-লিয়াকতসহ ৩ আসামি রিমান্ডে
পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন জনকে ৭ দিন করে রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত।
আদালতে আত্মসমর্পণ করা অপর চার আসামিকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।
রিমান্ডে নেওয়া বাকি দুই আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও পুলিশের উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিত।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে কড়া পুলিশি পাহারায় মামলার নয় আসামির মধ্যে ছয় আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচ তলায় অবস্থিত আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। তারা হলেন—পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সহকারী উপপরিদর্শক লিটন মিয়া।
বিকাল ৫টায় মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে পুলিশি প্রহরায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি মাইক্রোবাসে করে আদালতে আনা হয়। তাকে সরাসরি টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে নেওয়া হয়। এরপর আদালতের হাজতখানা থেকে এজলাস কক্ষে নিয়ে আসা হয় অপর ছয় আসামিকেও।
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেলাল উদ্দিন প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালতে আত্মসমর্পণকারী সাত আসামির জামিন নাকচ করে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সন্ধ্যা ৭ টা দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার জামিল উল হক আদালতে হাজির হয়ে আসামিদের প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। এই সময় রিমান্ডের পক্ষে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস (নিহত সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের বড় বোন) নিযুক্ত আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা ও মোহাম্মদ জাকারিয়াসহ আরো কয়েকজন আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। অপরদিকে রিমান্ড আবেদন নাকচের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। প্রায় ১ ঘণ্টা শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মামলার প্রধান তিন আসামি- লিয়াকত আলী, প্রদীপ কুমার দাশ ও নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপর চার জনের রিমান্ড নাকচ করে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালত আদেশে বলেন, এই চার জনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করলে কারাগার ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে আসামি কনস্টেবল সাফানুল করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সহকারী উপপরিদর্শক লিটন মিয়াকে প্রিজন ভ্যানে করে জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাত ৯টা ১৫ মিনিটে আদালত থেকে আসামি লিয়াকত আলী, প্রদীপ কুমার দাশ ও নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ভ্যানযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার আসামি উপপরিদর্শক টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। তারা দুই জন পলাতক রয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশ (সিএমপি) এর কমিশনার মো. মাহবুব রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, টেকনাফ থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অসুস্থ হয়ে মহানগরীর দামপাড়ায় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে বুধবার কক্সবাজার আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এই কথা জানতে পেরে তিনি (প্রদীপ কুমার দাশ) আদালতে আত্মসমর্পণের অভিপ্রায় কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপরই তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে বেলা আনুমানিক ১টার দিকে সিএমপির মাইক্রোবাসে করে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে তাকে আদালতে
আত্মসমর্পণ করার জন্য কক্সবাজারে পাঠানো হয়।
জেলা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আদালতে আত্মসমর্পণকারী সাত জনের মধ্যে প্রদীপ কুমার ছাড়া অপর ছয়জনকে জেলা পুলিশ লাইনস থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের আদালতে নিয়ে আসার খবরে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা আদালত ভবন প্রাঙ্গণে ভিড় করে। এক পর্যায়ে জনতার ভিড় সামলাতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এসময় আদালত ভবনের সাথে সংযুক্ত দুইটি রাস্তা কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
Comments