কলাপাড়ার পিআইও তপন কুমারকে সাময়িক বরখাস্ত
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তপন কুমার ঘোষকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলা নির্মাণ প্রকল্পের কোনো কাজ না করেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর জাল করে ঠিকাদারকে এক কোটি ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিল প্রদান এবং পরবর্তীতে আবার সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার অভিযোগে তাকে এ বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ৬ আগস্ট দেওয়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (ত্রাণ প্রশাসন) আবু সাইদ মো. কামাল স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত ২৬ জুলাই দ্য ডেইলি স্টারে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ওই বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরাধীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে এক কোটি ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন এবং এ টাকা সরকারি হিসাবে জমা প্রদান করেছেন। যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) ও (ঘ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তার বিরুদ্ধে উল্লেখিত বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা রুজু করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা, লক্ষ্মীবাজার ও গোঁড়া আমখোলা পাড়া, চম্পাপুর ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া, বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছোট বালিয়াতলী, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেপুর, মহিপুর ইউনিয়নের নিজ শিববাড়িয়া এবং চাকামইয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া ও গামুরবুনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলা নির্মাণের জন্য এক কোটি ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত ৩১ মার্চের মধ্যে এ কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু, কোনো কাজ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সারিকা ট্রেডার্সের মালিক মো. মামুন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয়ের যোগসাজশে ওই পরিমাণ টাকা ১৩টি বিল ভাউচারের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক গলাচিপা শাখা থেকে তুলে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ‘পিআইও তপন কুমার ঘোষের পাঠানো ফাইল আসলে তার বিষয়টি সন্দেহ হয় এবং তিনি তাতে কোনো স্বাক্ষর বা অনুমোদন দেননি।’
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তপন কুমার ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের চিঠি পেয়েছি। আমি স্বাক্ষর জাল করিনি। ধারণা করছি, আমাদের অফিসের অফিস সহায়ক মনির সংঘবদ্ধ কারোও সঙ্গে মিলে এ কাজটি করেছেন। আমি এ কাজের সঙ্গে জড়িত নই।’
পরবর্তীতে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সারিকা ট্রেডার্সের মালিক মো. মামুন উত্তোলন করা সমুদয় টাকা সরকারি হিসাবে জমা প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সারিকা ট্রেডার্সের মালিক মো. মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসরে কারণে কাজ করতে পারি নাই। কিন্তু, অফিস থেকে আমাকে বলেছে, বিল রেডি আছে, নিয়ে যেতে। আমি নিয়েছি। কারণ, পরে তো কাজ করতাম।’
বিলের অর্থ আবার সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরে আবার আমার কাছে টাকা ফেরত চাওয়া হলে আমি তা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে দেই।’
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ছাড়াও, প্রকল্প কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ পার্শ্ববর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাকালীন সেই উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে গ্রামীণ মাটির রাস্তা টেকসই করনের লক্ষ্যে হেরিং বন্ড এইচবিবিকরন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার কার্যক্রমের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেখানকার ইউএনও মাশফাকুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ঠিকাদার নির্বাচন এবং স্বাক্ষর জাল করে সুপারিশ ও অনুমোদনের জন্য প্রকল্প পরিচালক বরাবর পাঠিয়ে তার অনুমোদন নিয়ে আসে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার সই স্ক্যান করে জাল করা হয়েছে বলে রাঙ্গাবালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং জেলা প্রশাসক পটুয়াখালীকে অবহিত করেন।
রাঙ্গাবালীর ইউএনও’র পত্রের আলোকে পরবর্তীতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে গত ২০ মে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রকল্প পরিচালকসহ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে আলাদা চিঠি পাঠান।
Comments