ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের ৫৯টি ঘটনা ঘটেছে: প্রতিমন্ত্রী এনামুর

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, সারাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের ৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।
Dr. Md. Enamur Rahman-1.jpg
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, সারাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের ৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম, জালিয়াতি এবং দুর্নীতির প্রায় ৫৯টি ঘটনা শুনেছি। আমরা সেগুলো যাচাই করেছি। অভিযুক্তদের প্রত্যেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলা হয়েছে এবং বিচার চলছে। এ পদক্ষেপে দুর্নীতি বা অনিয়ম হ্রাস পেয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওএমএসের ১০ টাকা কেজির চাল, টিসিবি থেকে সয়াবিন তেল বিক্রি এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভিজিডি খাদ্য সহায়তা প্রকল্পে অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে।’

এ পর্যন্ত পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষকে ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

‘২৬ মার্চ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত কর্মহীন মানুষদের আমরা খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে,’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি জানান, ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য প্রত্যেক জেলায় একজন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে কমিটিতে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করছে। এসব কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং উপজেলা, ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা, সুশীল সমাজ ও এনজিও প্রতিনিধি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করায় স্বজনপ্রীতি বা দলীয় পরিচয় প্রয়োগের সুযোগ নেই।’

ডা. এনামুর বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছ থেকে রিপোর্ট পাচ্ছি কতটুকু বরাদ্দ বা কে কতটুকু পাচ্ছেন সে বিষয়ে। তাই ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ নেই।’

এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার তিন দফায় বন্যা হয়েছে। প্রথম দিকে ২৪ জুন থেকে পানি বাড়তে শুরু করে এবং ২৬ জুন সাতটি জেলায় নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে। এরপর নয়টি এবং তারপর ১২টি জেলা প্রথম ধাপে বন্যাকবলিত হয়। জুলাই মাসের ৭ তারিখের মধ্যে পানি কমা শুরু করলেও আবার ২০ জেলায় দ্বিতীয় দফায় বন্যা শুরু হয়। সেখানে পানি কমে গেলে এরপর তৃতীয় দফায় ৩৪টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে।’

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বন্যার আগাম তথ্য পেয়ে বন্যাকবলিত এলাকার ডিসিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলি। বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে বলি এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বলি। বন্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্যাকবলিত জেলায় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। বন্যাকবলিত প্রতিটি জেলা মনিটরিং করতে আমাদের অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্মসচিব বা এ পদমর্যাদার অফিসারদের একেক জেলার দায়িত্ব দেই।’

এ ছাড়া, দুর্যোগ মোকাবিলা ও ত্রাণ কার্যক্রম দেখার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ছয়টি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এনামুর বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৪ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুখাদ্য ক্রয়ে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং গবাদি পশুর খাবার ক্রয়ের জন্য ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। শুকনো খাবার প্যাকেট দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার। ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য ৩০০ বান্ডিল টিন এবং গৃহনির্মাণ বাবদ ৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ঈদের আগে ১ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন বিজিএফ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫৫ লাখ মানুষের মধ্যে বর্তমানে কেবল চরম দরিদ্ররা সাহায্য পাচ্ছেন এবং তা যথেষ্ট নয় বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

বন্যাকবলিত বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না উল্লেখ করে এনামুর বলেন, ‘৫৪ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী থাকলেও ১৪৫২টি আশ্রয়কেন্দ্রে মাত্র ৬৯ হাজার ৪৯৪ জন আশ্রয় নিয়েছে। সে হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রে লোক সংখ্যা কম এসেছে। অনেকেই নিজেদের সহায় সম্বল রক্ষার জন্য বাড়ি ছাড়তে চান না।’

সব বন্যাকবলিত জায়গা থেকে পানি নেমে যেতে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বৃষ্টিপাতের কারণে আবার পানি বাড়তে পারে। তবে সেটি নদীর বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বন্যার কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার রিপোর্ট পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্যার্তদের পুনর্বাসিত করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পানি নেমে যাওয়ার পরও ১৪ দিন সহায়তা অব্যাহত রাখব। যাদের বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে তাদের টিন এবং গৃহ নির্মাণের খরচ দেওয়া হবে,’ যোগ করেন এনামুর রহমান।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago