শীর্ষ খবর
করোনামুক্ত হলেন এফডিএসআর’র যুগ্ম মহাসচিব ডা. রাহাত চৌধুরী

‘মানসিক শক্তিটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন’

করোনা শনাক্তের প্রায় ২০ দিন পর সুস্থ হলেন চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিসের (এফডিএসআর) যুগ্ম মহাসচিব, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী।
ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

করোনা শনাক্তের প্রায় ২০ দিন পর সুস্থ হলেন চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিসের (এফডিএসআর) যুগ্ম মহাসচিব, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী।

আজ মঙ্গলবার ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী নিজেই দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত ২০ জুলাই প্রথম তিনি জ্বর অনুভব করলে পরদিন করোনা পরীক্ষার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা দেন। পরের দিন (২২ জুলাই) পাওয়া ফলাফলে করোনা ‘পজিটিভ’ আসে। এর মধ্যে, গত ৪ আগস্ট দ্বিতীয়বার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে উপসর্গ না থাকলেও পরের দিন পাওয়া ফলে আবারও করোনা ‘পজিটিভ’ আসে। সর্বশেষ গতকাল আবার নমুনা দিলে আজ পাওয়া ফলে করোনা ‘নেগেটিভ’ আসে।

করোনা আক্রান্তের সময়কার অভিজ্ঞতা নিয়ে ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘গত ২০ জুলাই হঠাৎ আমার জ্বর অনুভূত হয়। যেহেতু করোনার মধ্যেও রোগী দেখছিলাম, তাই দেরি না করে পরের দিনই নমুনা দেই এবং এর পরের দিন জানতে পারি করোনা পজিটিভ। যেহেতু আমার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাই প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। তবে, আমার ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিকটা হলো সংক্রমণটা মাইল্ড (হালকা) ছিল। অর্থাৎ, আমার মধ্যে উপসর্গ খুব কম দেখা গেছে, গলায় হালকা খুসখুসে ভাব ছিল এবং চার থেকে পাঁচ দিন জ্বর ছিল, তাও সেটা ১০০ ডিগ্রির উপরে কখনো যায়নি। তবে, দৈনিক তিন বার করে ডায়াবেটিস চেক করতাম। বিগত চার থেকে পাঁচ বছর আমার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তা বেড়ে যায়। তাই আমার ইনসুলিন পরিবর্তন করতেও হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার কো-মরবিডিটি থাকায় একটু ভয়ও কাজ করছিল। প্রত্যেকটা মুহূর্তই অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গেছে বলা যায়। মনে হয়েছে, শরীর খারাপ করবে কি না, অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাবে কি না। আসলে শারীরিক যন্ত্রণার চেয়ে মানসিক যন্ত্রণাটাই ছিল বেশি। তাই এ সময়ে মানসিক শক্তিটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমার পরিবার অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। আরেকটি বিষয় ভালো লেগেছে যে, দুই বার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দুই জন চিকিৎসক আমাকে ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও পরিচিতজনদের কাছ থেকেও সাপোর্ট পেয়েছি। তারা সার্বক্ষণিক আমার খোঁজ নিয়েছেন।’

‘এ সময়ে শরীরের ইমিউন সিস্টেম মজবুত করতে অতিরিক্ত কিছু ওষুধ খেয়েছি। আর বুকে সিটি-স্ক্যানও করিয়েছি। সেখানে হালকা সংক্রমণ (১৫ শতাংশ) পাওয়া গেছে। তাই গরম পানির ভাপও নিয়েছি প্রতিদিন একবার করে। এ ছাড়া, যেহেতু করোনা পজিটিভ আসার পর থেকেই নিজ বাসায় আইসোলেশনে ছিলাম, তাই নিজের রুমের মধ্যেই হাঁটাহাঁটি করেছি নিয়মিত। আর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করেছিলাম প্রতিদিন’, বলেন তিনি।

দেশে কতজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা যাচ্ছেন ও কতজন চিকিৎসক করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন, এই তথ্য সংগ্রহ করছে এফডিএসআর। দেশে করোনার সংক্রমণের শুরু থেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসক মারা যাওয়ার তথ্য নিয়মিত দ্য ডেইলি স্টারকে সরবরাহ করছেন ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী।

বর্তমানে এফডিএসআর’র সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার। সংগঠন নিয়ে ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের কাজ হচ্ছে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, অধিকার ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে কাজ করা। গত ১৯ মার্চ দেশে প্রথম আমরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পিপিই’র প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে পর্যাপ্ত পিপিই’র ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাই। করোনাকালীন সারাদেশে যখন পিপিই নিয়ে সংকট ছিল, আমরা তখন চেষ্টা করেছি ডোনেশন সংগ্রহের মাধ্যমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পিসিআর ল্যাবে বিনা মূল্যে মানসম্পন্ন পিপিই পৌঁছে দিতে। সারাদেশের অনেক চিকিৎসকদের কাছেও বিনা মূল্যে পিপিই পৌঁছে দিয়েছি। একইসঙ্গে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি লেভেলেও আমরা কাজ করছি। তা ছাড়া, কোনো চিকিৎসক যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে আমরা তার পাশে থেকে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টাও করি।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি(ইউএসটিসি) কর্তৃক পরিচালিত মেডিকেল স্কুলের ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লায়েড হেলথ সাইন্সেস (আইএএইচএস) থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন ৪৭ বছর বয়সী চিকিৎসক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তিনি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ফরিদপুরের ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজে শিক্ষক ও চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। সপ্তাহে চার দিন সেখানে পড়ানোর পাশাপাশি রোগী দেখেন তিনি। এ ছাড়াও, সপ্তাহে তিন দিন রাজধানীর উত্তরার আহছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালেও রোগী দেখেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

India extends export curbs on onions until Mar 31 

India has extended the ban on the exports of onion till March next year with a view to increasing availability in domestic markets and to keep prices in check, according to a notification issued by the Directorate General of Foreign Trade yesterday. 

39m ago