রোমাঞ্চকর জয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
প্রথমার্ধে নেওয়া লিড লম্বা সময় পর্যন্ত ধরে রাখল আতালান্তা। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথমবারের মতো খেলতে আসা দলটি তখন ইতিহাস গড়ার স্বপ্নে বিভোর। উল্টোদিকে, আসর থেকে বাদ পড়ার ঘোর শঙ্কায় ছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পাল্টে গেল সবকিছু। চরম নাটকীয়তায় তিন মিনিটের মধ্যে দুবার নিশানা খুঁজে নিল টমাস টুখেলের দল। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে মার্কুইনহোস সমতায় ফেরানোর পর যোগ করা সময়ে জয়সূচক গোলটি করলেন বদলি নামা এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোটিং। রোমাঞ্চকর জয়ে সেমিফাইনালে পা রাখল প্যারিসিয়ানরা।
বুধবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালে লিসবনের এস্তাদিও দা লুজে আতালান্তাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে পিএসজি। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের পর এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে ফরাসি লিগ ওয়ানের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
বিরতির আগে বেশ কয়েকটি দারুণ সুযোগ তৈরি করেন পিএসজি তারকা নেইমার। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ধরিয়ে দেন কাঁপন। কিন্তু গোলপোস্টের সামনে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। উল্টো প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ের গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আতালান্তা। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ক্ষতি পুষিয়ে দেন নেইমার। মার্কুইনহোসকে সহায়তা করার পাশাপাশি অবদান রাখেন চুপো-মোটিংয়ের গোলেও।
প্রথমার্ধে লড়াই হয়েছে প্রায় সমানে সমান। বল দখলে পিএসজি কিছুটা এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে, আক্রমণ ও গোলমুখে শট নেওয়ায় আধিপত্য ছিল আতালান্তার। তবে বিরতির পর কৌশলে পরিবর্তন এনে রক্ষণে মনোযোগ দেয় তারা। ইতালিয়ান ক্লাবটির উদ্দেশ্য ছিল জাল অক্ষত রেখে ওই এক গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া। কিন্তু খাদের কিনারা থেকে পিএসজি ঘুরে দাঁড়ায় অবিশ্বাস্যভাবে। ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে আক্রমণের বন্যা বইয়ে দিয়ে শেষ হাসি হেসে মাঠ ছাড়ে তারা।
ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত পিএসজি। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়লেও নিশানা ভেদ করতে ব্যর্থ হন নেইমার। গোলরক্ষক মার্কো স্পোর্তিয়েল্লোকে একা পেয়েও মারেন বাইরে। তার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়ার খেসারত কিছুক্ষণ বাদেই দিতে হতে পারত পিএসজিকে। কিন্তু পরপর দুই মিনিটে দুটি দুর্দান্ত সেভ করে দলকে বাঁচান গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। একাদশ মিনিটে হান্স হেটবোরের হেড রুখে দেওয়ার পর মাতিয়া কালদারার হেডও ফেরান তিনি।
১৮তম মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন নেইমার। অপেক্ষায় ছিলেন সতীর্থ মাউরো ইকার্দি। কিন্তু নেইমার গোলপোস্টে শটও নেননি, আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে পাসও দেননি। তার এলোমেলো প্রচেষ্টা চলে যায় মাঠের বাইরে। এর আট মিনিট পর পিছিয়ে পড়ে পিএসজি। সৌভাগ্যক্রমে দুভান জাপাতার পায়ে লাগার পর ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে যান মারিও পাসালিচ। বাঁ পায়ের নিখুঁত কোণাকুণি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার।
দলকে সমতায় ফেরানোর দারুণ দুটি সুযোগ এরপর আসে নেইমারের সামনে। কিন্তু ফের হতাশ করেন তিনি। ২৮তম মিনিটে বেশ কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তার নেওয়া দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৪১তম মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে বল উড়িয়ে মারেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম সুযোগটি পেয়েছিল আতালান্তা। তবে ৫৯তম মিনিটে পাঁচ গজ দূর থেকে ডিফেন্ডার বেরাত জিমসিতির ভলি বাইরে চলে গেলে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি তারা। পরের মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন চোট থেকে সেরে ওঠা কিলিয়ান এমবাপে। বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি স্ট্রাইকারকে পেয়ে আক্রমণে ধার বাড়ায় পিএসজি।
৭৩তম মিনিটে ডি-বক্সের বাম দিক থেকে এমবাপের নেওয়া শট পা দিয়ে রুখে দেন স্পোর্তিয়েল্লো। সাত মিনিট পর তার আরেকটি প্রচেষ্টা প্রতিহত হয়। মাঝে নেইমারের দুর্বল শটও সহজে লুফে নেন আতালান্তা গোলরক্ষক। ৮২তম মিনিটে থিয়াগো সিলভার শট আর ৮৬তম মিনিটে চুপো-মোটিংয়ের হেডও জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি।
একটানা আক্রমণের সুফল পিএসজি পায় ঠিক ৯০তম মিনিটে। নেইমার ঠিকভাবে শট নিতে না পারলেও ছোট ডি-বক্সে বল পেয়ে যান স্বদেশি মার্কুইনহোস। তার আলতো টোকায় আতালান্তার কালদারার গায়ে লেগে বল পৌঁছায় জালে। ১৪৯ সেকেন্ডের ব্যবধানে আবারও গোল উৎসব করে দলটি। নেইমারের রক্ষণচেরা পাস পেয়ে গোলমুখে বাড়ান এমবাপে। সহজ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আতালান্তাকে স্তব্ধ করে দেন ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড চুপো-মোটিং। নাটকীয়তা ছড়িয়ে শেষ চারে নাম লেখায় পিএসজি।
প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পিএসজির প্রতিপক্ষ হবে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ বা আরবি লাইপজিগ। দল দুটি দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাতে মুখোমুখি হবে পরস্পরের।
Comments