বার্সাকে তছনছ করে সেমিফাইনালে বায়ার্ন

অবিশ্বাস্য বিশাল জয়ে বাভারিয়ানরা পা রাখল প্রতিযোগিতার শেষ চারে।
barca and bayern
ছবি: রয়টার্স

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ে বার্সেলোনা পাত্তাই পেল না বায়ার্ন মিউনিখের কাছে। স্প্যানিশ ক্লাবটিকে তছনছ করে দিলো জার্মান বুন্ডেসলিগার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। অবিশ্বাস্য বিশাল জয়ে তারা পা রাখল প্রতিযোগিতার শেষ চারে।

শুক্রবার রাতে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের স্তাদিও দা লুজে বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বায়ার্ন। তাদের পক্ষে জোড়া গোল করেন টমাস মুলার ও বদলি নামা ফিলিপে কৌতিনহো। জালের দেখা পান ইভান পেরিসিচ, সার্জ গ্যানাব্রি, জশুয়া কিমিচ ও রবার্ট লেভানডভস্কিও। ডেভিড আলাবার আত্মঘাতী গোলের পর বার্সার হয়ে ব্যবধান কমান লুইস সুয়ারেজ।

১৯৯২ সালে শুরু হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের (এর আগে ইউরোপিয়ান কাপ নামে পরিচিত ছিল ইউরোপের সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতাটি) ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে নক-আউট পর্বে আট গোল করার কীর্তি গড়ল বায়ার্ন।

মৌসুম জুড়েই বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল রক্ষণভাগে। সে সমস্যা যে দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে তা এদিন আরও একবার বুঝিয়ে দিল বায়ার্ন। ম্যাচের প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যেই জয় এক প্রকার নিশ্চিত করে ফেলে দলটি। এ সময়ে বাভারিয়ানরা গোল পায় চারটি।

ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় বায়ার্ন। বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণ শানিয়ে গোল আদায় করে নেয় দলটি। পেরিসিচের ক্রস ধরে ডি-বক্সের সামনে লেভানডভস্কির সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে অসাধারণ এক শটে জাল খুঁজে নেন মুলার।

সমতায় ফিরতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেয়নি কাতালানরা। যদিও বায়ার্নের ভুলেই গোল খায় তারা। নিজেদের অর্ধ থেকে সতীর্থের বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সের দিকে আগুয়ান সুয়ারেজের উদ্দেশ্যে বাড়িয়েছিলেন ফ্রেংকি ডি ইয়ং। তবে সে বল ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল ঢুকিয়ে দেন আলাবা।

নবম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগ নষ্ট করে বার্সেলোনা। গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি সুয়ারেজ। নেলসন সেমেদোর বাড়ানো বল ফাঁকায় পেয়ে আলতো চিপ করে লক্ষ্যভেদ করতে চেয়েছিলেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। তবে গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়ারের গায়ে লেগে ফিরে আসলে নষ্ট হয় সে সুযোগ।

bayern munich
ছবি: রয়টার্স

পরের মিনিটে দুর্ভাগ্য বার্সার। বাঁ প্রান্ত থেকে লিওনেল মেসির দূরপাল্লার শট বারপোস্টে লেগে ফিরে না আসলে এগিয়ে যেতে পারতো কাতালানরা।

২১তম মিনিটে ফের এগিয়ে যায় বায়ার্ন। নিজেদের অর্ধে সার্জি রবার্তো বল হারালে বাঁ প্রান্তে পেরিসিচকে পাস দেন গ্যানাব্রি। ডি-বক্সে ঢুকে অসাধারণ এক কোণাকুণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার।

২৭তম মিনিটে পেরিসিচের আরও একটি ক্রস থেকে গোল প্রায় পেয়ে গিয়েছিল বায়ার্ন। লেভানডভস্কির শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন। তবে ১০ সেকেন্ড পরেই লিওন গোরেৎজকার বাড়ানো বল ধরে দারুণ এক গোল দেন গ্যানাব্রি।

পরের মিনিটেই টের স্টেগেনের ভুলে আরও একটি গোল খেতে বসেছিল বার্সা। তবে লেভানডভস্কির শট সে দফায় কোনোরকমে ফেরান তিনি।

৩১তম মিনিটে চতুর্থ গোল হজম করে বার্সা। কিমিচের ক্রস থেকে দারুণ টোকায় বল জালে জড়িয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল পান মুলার। ফলে প্রথমার্ধেই তিন গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় বাভারিয়ানরা।

বিরতির পর ৪৮তম মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বল ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন লেভানডভস্কি। শট না নিয়ে আগুয়ান পেরিসিচকে পাস দেন পোলিশ স্ট্রাইকার। তবে ফাঁকায় থেকেও ভালো শট নিতে পারেননি তিনি। তার দুর্বল প্রচেষ্টা সহজেই ধরে ফেলেন টের স্টেগেন।

চার মিনিট পর ফের নিশানা ভেদ করেছিল হ্যান্সি ফ্লিকের দল। তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয় তা।

৫৭তম মিনিটে ব্যবধান কমায় বার্সা। নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের সামনে থাকা সুয়ারেজকে বল দেন জর্দি আলবা। ডি-বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কোণাকুণি শটে জাল খুঁজে নেন তিনি।

barcelona messi
ছবি: রয়টার্স

তবে ম্যাচে ফেরার যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সুয়ারেজ, তা মুছে যেতে ছয় মিনিটও লাগেনি। ফের ব্যবধান বাড়িয়ে বার্সার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা শেষ করে দেয় বায়ার্ন। এবার গোল করেন কিমিচ। তবে গোলের মূল অবদান তরুণ ডিফেন্ডার আলফন্সো ডেভিসের। বাঁ প্রান্ত দিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে নিখুঁত এক পাস দিয়েছিলেন তিনি।

দুই মিনিট পর আরও একটি গোল প্রায় হজম করে ফেলেছিল বার্সা। তবে কিংস্লে কোমানের শট দারুণ এক ট্যাকলে ফিরিয়ে দেন আলবা।

৭৭তম মিনিটে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মেসি। তবে দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ঠেকিয়ে দেন বায়ার্ন গোলরক্ষক নয়ার।

এরপর শুরু হয় বার্সেলোনা থেকে ধারে বায়ার্নে আসা ফিলিপ কৌতিনহোর জাদু। সাত মিনিটের ব্যবধানে নিজে দুটি গোল করেন। পাশাপাশি একটি গোলের জোগানও দেন। তাতে বিরাট ব্যবধানে হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে কিকে সেতিয়েনের শিষ্যরা। কোনো শিরোপা ছাড়াই এবারের মৌসুম শেষ করতে হলো তাদের।

৮২তম মিনিটে ষষ্ঠ গোল খায় বার্সা। গোল করেন বার্সার সেরা তারকা লেভানডভস্কি। নিখুঁত এক পাস দিয়ে গোলের কারিগর ব্রাজিলিয়ান কৌতিনহো। 

তিন মিনিট পর নিজেই লক্ষ্যভেদ করেন কৌতিনহো। মুলারের পাস থেকে বার্সার জাল কাঁপান তিনি। চার মিনিট বাদে প্রতিপক্ষের কফিনে শেষ পেরেকটিও ঠুকে দেন কৌতিনহোই। আরেক বদলি লুকাস হার্নান্দেজের পাসে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ম্যানচেস্টার সিটি অথবা অলিম্পিক লিওঁর মুখোমুখি হবে বায়ার্ন। দল দুটি আগামীকাল শনিবার রাতে শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে পরস্পরকে মোকাবিলা করবে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago