প্রবাস

নতুন সংকটে দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর অর্থনীতির দেশ। নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে কোরিয়ানদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা বেশ জোরদার হয়।
South Korea protest
সিউলে সরকারবিরোধী সমাবেশ। ১৬ আগস্ট ২০২০। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর অর্থনীতির দেশ। নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে কোরিয়ানদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা বেশ জোরদার হয়।

রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাণবন্ত সংসদ ক্রমবর্ধমানভাবে কাজ করছে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরও সুদৃঢ় করতে।

কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে জনগণের প্রেসিডন্ট মুন ইন জে ইনের দল সংসদে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে কয়েকমাস আগে। কিন্তু, দেশটির আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে না পারায় প্রেসিডেন্ট মুনজে ইনের জনপ্রিয়তা ৭০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশের নিচের দিকে নামছে।

আবাসন নিয়ে জন-অসন্তোষের সঙ্গে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে বর্তমান প্রশাসনকে। সঙ্গে আছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে নানা কর্মসূচির অগ্রগতি না হওয়া।

করোনাকালে প্রসারমান অনেক ব্যবসা স্থবির হলেও আবাসনশিল্পে অনেক বিনিয়োগ আসে। একদিকে, স্বল্প সুদের হার ও অর্থনীতিতে সরকারের নগদ অর্থের সংস্থান করোনা মহামারির ক্ষতি কমাতে কিছুটা সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

অন্যদিকে, আবাসনের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্পআয়ের মানুষ বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এগুলো মোকাবিলায় সরকার কৌশলী ভূমিকা নেয়।

বিরোধীদল দাবি করতে থাকে— সরকার দলীয় সংসদ সদস্যসহ প্রেসিডেন্ট হাউজের উচ্চপদস্থ কয়েকজন ব্যক্তি আবাসনের দাম বাড়িয়ে নিজেরা সুবিধা নিয়েছেন।

সরকারদলের মধ্যেও সমালোচনা শুরু হতে থাকে। সাধারণ জনগণও সরকারের আবাসন নীতি বা নতুন কৌশলের সমালোচনা করতে থাকেন।

গণমাধ্যমের সঙ্গে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী আলোচনা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে গুজব ডালপালা মেলতে শুরু করে যে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রেসিডন্ট হাউজের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ সরকারিদলের লোকজন আবাসনে ভালো বিনিয়োগ করতে তাদের আত্মীয়-বন্ধুদের উপদেশ দিয়েছেন। এই ধরনের গুজব প্রমাণিত না হলেও অনেকে তা বিশ্বাস করতে শুরু করেন।

সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতিরা চতুর্থ বছরে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনও কি সেই ধারার দিকে যাচ্ছেন?— এমন প্রশ্ন অনেকের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এখনও আস্থা রাখতে চান পোড় খাওয়া লিবারেল রাজনৈতিক মুন জেইন ও তার দলের প্রতি।

মুনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক যুবক, নারী বা স্বল্প আয়ের মানুষদের সমর্থন মূল ভিত্তি ছিল। কিন্তু, নীতিগত ব্যর্থতার কারণে তাদের সমর্থন দূরে চলে যাচ্ছে।

যখন মুনের আবাসন নীতিমালা ব্যর্থ হওয়ার কারণে সমালোচনা হচ্ছে, তখন তিনি উপস্থাপন করতে পারেন এমন কোনো বিকল্প তার হাতে নেই। কারণ, আবাসন নীতিমালা অল্প সময়ের মধ্যে কার্যকর হওয়া কঠিন।

এর সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু চলে আসে। জুন কাওয়ং-হুন নামে এক জনপ্রিয় রক্ষণশীল ধর্মযাজক করোনার কারণে উপসানালয়ে সীমিত পরিসরে প্রার্থনা করায় সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি সিউলে বেশ বড় বিক্ষোভের আয়োজন করেন।

এদিকে, করোনাভাইরাস ছড়ানোর ভয়ে সরকার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালেও সেই সমাবেশে অনেক মানুষ যোগ দেন। ধর্মযাজকসহ তার অনুসারী ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বেশ কয়েকজনের পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসে। বিক্ষোভ পর থেকে হঠাৎ করোনা অনেক বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও যারা সমাবেশে এসেছিলেন তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করোনা পরীক্ষার আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

প্রধানমন্ত্রী চুং সি-কিউন জাতির উদ্দেশে এক বিশেষ বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ভাইরাসের বিস্তার দ্রুত ঠেকাতে সরকার সিউল মহানগরীতে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম কঠোর করবে।’

‘যদি এই নিয়ম-কানুন আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হয় তবে আমাদের কাছে সামাজিক দূরত্বের নিয়মকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা ছাড়া আর কোনও বিকল্প থাকবে না। এটি দেশের অর্থনীতি ও নাগরিকের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে,’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গির্জাসহ উপসানালয়ে নিয়ন্ত্রিত প্রার্থনার পাশাপাশি জনসমাবেশ না করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে।

আবাসন শিল্পে সংকট, উত্তর কোরিয়া সম্পর্ক উন্নয়নে অগ্রগতি না আসা, নতুন করে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় আপাতত কিভাবে এসব বিপর্যয় সামলে উঠেন মুন জে ইনের প্রশাসন তা এখন দেখার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago