লিঁওর স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে বায়ার্ন
দশ বছর পর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠা অলিম্পিক লিঁও শুরুর দিকে খেলল দারুণ ফুটবল। একের পর এক আক্রমণ করে আসরের হট ফেভারিট বায়ার্ন মিউনিখকে কাঁপিয়ে দিলো তারা। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় কাঙ্ক্ষিত গোল পাওয়া হলো না দলটির। যার খেসারত তাদেরকে দিতে হলো কড়ায়-গণ্ডায়। ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল বায়ার্ন। হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা আরও একবার উপহার দিলো নজরকাড়া নৈপুণ্য। দাপট দেখিয়ে তারা জায়গা করে নিল ইউরোপের সেরা ক্লাব আসরের ফাইনালে।
বুধবার রাতে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের স্তাদিও হোসে আলভালাদেতে লিঁওকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে বায়ার্ন। এর আগে চারটি আসরে সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া দলটি অবশেষে গেরো খুলতে পারলো। এই নিয়ে ১১তম বারের মতো ফাইনালে উঠল বাভারিয়ানরা। প্রথমার্ধে জার্মান পরাশক্তিদের পক্ষে জোড়া গোল করেন সার্জ ন্যাব্রি। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ান রবার্ত লেভানদভস্কি।
এমন ম্যাচে ঠিক কাকে দুষবেন লিঁও কোচ রুদি গার্সিয়া; নিজের ভাগ্যকে নাকি খেলোয়াড়দের? কারণ তিন তিনবার যে সুযোগ মিস করেছেন তার ফরোয়ার্ডরা, তা এক প্রকার অবিশ্বাস্যই বটে। ফাঁকায় গোলরক্ষককে পেয়েও একবারও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। অথচ ম্যাচের ১০ মিনিট যেতেই দুই গোলে গিয়ে যেতে পারতো তারা। সেক্ষেত্রে ম্যাচের ফলাফলও হতে পারতো ভিন্ন।
চতুর্থ মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি নষ্ট করেন মেমফিস ডিপাই। নিজেদের অর্ধ থেকে মেক্সেন্সি কাকুরেটের বাড়ানো বলে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে বল পেয়ে যান এ ডাচ তারকা। সামনে তখন গোলরক্ষক ছাড়া আর কেউ নেই। এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককেও কাটিয়ে যে শট নেন তিনি তা সাইডবার কাঁপায়। ফলে এগিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগ মিস করেন তিনি।
১১তম এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল বায়ার্নেরও। লেভানদভস্কির বাড়ানোর বলে একেবারে ফাঁকায় পেয়েও জোরালো শট নিতে পারেননি লিওন গোরেটজকা। ফলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক অ্যান্থনি লোপেজ ।
ছয় মিনিট আরও একটি অবিশ্বাস্য মিস করে লিঁও। এবার মিস করেন কার্ল তোকো একাম্বি। আবারও নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বল অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে অনেকটা ফাঁকায় বল পেয়ে যান তিনি। কিন্তু বল ধরে কিছুটা ধীর গতিতে আগানোয় ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেন তিনি। ততোক্ষণে এক ডিফেন্ডার চলে আসেন। ট্যাকল কলেও সৌভাগ্যক্রমে বল পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার নেওয়া শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসলে হতাশা বাড়ে দলটির।
আর তার পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় বায়ার্ন। জশুয়া কিমিচের বাড়ানো বল ধরে তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো এক শটে অসাধারণ এক গোল পান ন্যাব্রি।
২৫তম মিনিটে এক ডিফেন্ডারের ভুলে ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন ন্যাব্রি। জোরালো শটও নিয়েছিলেন। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক লোপেজ। তবে সাত মিনিট পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করে দলটি। আবারও সেই জেনাব্রি। নিজেদের অর্ধ থেকে কাটিয়ে বল বাঁ প্রান্তে পাস দিয়েছিলেন ইভান পেরিসিচকে। বল পেয়ে লেভানদভস্কির উদ্দেশ্যে ক্রস করেছিলেন তিনি। কিন্তু দুবার চেষ্টা করেও ঠিকমতো শট নিতে পারেননি পোল্যান্ডের স্ট্রাইকার। লিঁও গোলরক্ষক লোপেজও বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন। তাতে বল পেয়ে যাওয়া ন্যাব্রি জালের ঠিকানা খুঁজে নেনে খুব সহজে।
৩৮তম মিনিটে ফের হতাশ করেন লেভানদভস্কি। ফাঁকা জালে বল পাঠাতে ব্যর্থ হন তিনি। ডানপ্রান্ত দিয়ে গোলমুখে অসাধারণ একটি ক্রস করেছিলেন ন্যাব্রি। প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন লেভাও। কিন্তু বিস্ময়করভাবে পা ছোঁয়াতে পারেননি দারুণ ছন্দে থাকা এই স্ট্রাইকার।
ছয় মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন গোরেটজকা। কিন্তু এই জার্মান মিডফিল্ডারের দূরপাল্লার শট বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন লেভানদভস্কি। সময়মতো সরে যেতে না পারায় বল তার গায়ে লেগে চলে যায় মাঠের বাইরে।
দুই গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া বায়ার্ন দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে একই ছন্দে। ৫১তম মিনিটে পেরিসিচ লিঁওর ডি-বক্সের ভেতরে অনেকখানি জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন। ক্রোয়াট ফরোয়ার্ড নিয়েছিলেন বাঁকানো শট। কিন্তু গতি না থাকায় বল সহজেই লুফে নেনে গোলরক্ষক লোপেজ।
পাঁচ মিনিটে কর্নার থেকে ব্যবধান কমানোর সুযোগ ছিল মার্সেলোর। ভালো হেড দিয়েছিলেন তিনি। তবে ঝাঁপিয়ে তার হেড লুফে নেন বায়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়ার। ৫৮তম মিনিটে আরও একটি অবিশ্বাস্য মিস করে লিঁও। আবার সেই একাম্বি। হাসেম আরিয়ারের কাছ থেকে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে যান এ ক্যামেরুন তারকা। কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত কোনো শট নিতে পারেননি। গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে নষ্ট করেন সে সুযোগ।
৭৭তম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে দারুণ এক কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন বদলী খেলোয়াড় ফিলিপ কৌতিনহো। তবে অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর বল জালে জড়িয়েছিলেন এ ব্রাজিলিয়ান। অফসাইডের কারণে বাতিল হয় সে গোল।
৮৪তম মিনিটে লক্ষ্যে ভালো শট নিয়েছিলেন আওয়ার। তবে তার শট লুফে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি নয়ারের। তিন মিনিট পর গোলের দেখা পান লেভানদভস্কি। লিঁওর জালে তৃতীয় গোল করে চলতি আসরের অসাধারণ যাত্রা ধরে রাখেন। সেটপিস থেকে কিমিচের নিখুঁত ক্রসে দারুণ হেড করে লক্ষ্যভেদ করেন এ পোলিশ তারকা। নয় ম্যাচে এটা তার ১৫তম গোল। আসরের সব ম্যাচেই গোল পেয়েছেন তিনি। ফলে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা।
আগামী সোমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) মুখোমুখি হবে জার্মান বুন্ডেসলিগার শিরোপাধারী বায়ার্ন। আগের রাতে আরবি লাইপজিগকে একই ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতাটির ফাইনালে উঠেছে ফরাসি লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
Comments