জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ স্বীকৃতি পেলেন ৪ বাংলাদেশি

বাম থেকে রিজভী হাসান, তানভীর হাসান সৈকত, সিফাত নুর ও আঁখি। ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ (রিয়েল লাইফ হিরো) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন চার বাংলাদেশি। বিশ্ব মানবতা দিবস উপলক্ষে মানবিক সহায়তার সম্মুখযোদ্ধাদের বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘রিয়েল লাইফ হিরোস’ নামের একটি ক্যাম্পেইন করে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা (ইউএনওসিএইচএ)৷

‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই চার জন হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত, ব্র্যাকের স্থপতি রিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নুর ও দারিদ্র্য জয় করে সাবলম্বী হয়ে ওঠা আঁখি।

রিজভী হাসান সম্পর্কে ইউএনওসিএইচএর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সামাজিক সমস্যাকে উপলব্ধি করে ভবনের নকশা তৈরিতে আগ্রহী ছিলেন স্থপতি রিজভী। তিনি বস্তিতে থাকা মানুষের চাহিদার দিকে খেয়াল রেখেছেন, যাতে তাদের উপযোগী করে ভবনের নকশা তৈরি করা যায়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের কাজ করেন তিনি।

রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হন রিজভী। মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আবাসনের ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেছেন।

তিনি সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য কম খরচে নিরাপদ স্থাপনা তৈরি করতে শুরু করেন। এসব স্থাপনায় রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা নারীদের কাউন্সেলিংসহ দক্ষতা উন্নয়নের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ ব্যতিক্রমী এসব স্থাপনার মাধ্যমে বহু নারীকে নিরাপদে সেবা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যেতে পারছে ব্র্যাক ও ইউনিসেফ।

দ্য ডেইলি স্টারকে রিজভী বলেন, 'আমার এখানকার অভিজ্ঞতা আমি যেকোনো সংকটের মূহুর্তে কাজে লাগাতে চাই।

আমি চাই, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সুন্দর মনের মানুষরা তাদের সৃজনশীলতা নিয়ে সামনে এগিয়ে আসবে, পেশার বাইরেও কাজের ছাপ রাখবে।'

বাস্তব জীবনের নায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া আরেক বাংলাদেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত৷

গত মার্চে বাংলাদেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে যেতে শুরু করেন, তানভীর ও তার সঙ্গীরা তখন ক্যাম্পাস থেকেই প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেন৷ গত এপ্রিলের শুরু থেকে টানা ১১৬ দিন ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষদের মধ্যে

ঢাবি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) খাবার সহায়তা দিয়েছেন তিনি। এরপর সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা করতে সেখানে যান তানভীর।

দেশের যেকোনো দুর্যোগে ভবিষ্যতেও মানুষের পাশে থাকার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আত্মতৃপ্তির জন্য মানুষের সেবায় কাজ করেছি। এ ধরনের স্বীকৃতি ভবিষ্যতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। যেকোনো দুর্যোগে বাংলাদেশের মানুষের সেবায় কাজ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।'

যে কোনো সংকটের সময় খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের মতো তথ্য ও যোগাযোগের প্রয়োজন দেখা দেয়৷ এই তথ্য ও যোগাযোগ হতে হয় জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায়। এ ক্ষেত্রে একজন অনুবাদকের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংকটের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন বাস্তব জীবনের আরেক নায়ক অনুবাদক সিফাত নুর।

২০২০ সালের মার্চে ট্রান্সলেটর উইদাউট বর্ডারস নামের একটি সংস্থায় কাজ শুরুর পর ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি বিদেশি শব্দের বাংলা অনুবাদ করেছেন তিনি৷ আইএফআরসি ও

ইউএনএইচসিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার হয়ে এই শব্দগুলো অনুবাদের মাধ্যমে সিফাত অনেক মানুষের কাছে জীবনরক্ষাকারী তথ্য পৌঁছে দিতে পেরেছেন৷ তার অনুবাদের মাধ্যমে সম্প্রতি করোনা মহামারিতে বহু মানুষ নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখতে পেরেছেন৷

করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশি তরুণী আঁখি৷ আঁখি সম্পর্কে ইউএনওসিএইচএ বলেছে, বাংলাদেশের অনেক শিশুর মতোই একসময় শিশুশ্রমে নিয়োজিত ছিলেন আঁখি৷ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন তাকে পুনর্বাসনে সহায়তা করে৷ বয়সের কারণে স্কুলের পড়াশোনা শেষ না হলেও সেলাইকাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি৷

একটি সেলাই মেশিন ও কিছু কাপড় তাকে দেওয়া হয়েছিল৷ সেখান থেকেই তিনি নিজের গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে থাকেন৷ বর্তমানে মা ও বড় বোনের সহযোগিতায় নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন আঁখি৷ দারিদ্র্যতা কাটিয়ে নিজেই এখন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে যখন মাস্ক-সংকট দেখা যায়, তখন মাস্ক তৈরি করতে শুরু করেন আঁখি৷ কম দামে দরিদ্র মানুষের কাছে সেসব মাস্ক পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি৷

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

7h ago