পঞ্চগড়ে করতোয়ার ভাঙনে ঝুঁকিতে সড়ক-বিদ্যালয়-মসজিদ-কবরস্থান
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে করতোয়া নদীর ভাঙন তীব্র হওয়ায় পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়কটি বিলীন হতে চলেছে। ফুলতলা হয়ে মানিকপীড় গড়েরডাঙ্গার এই সড়কটির বেহাল দশার কারণে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বিদ্যালয়, মসজিদ, গোরস্থান, ফসলি জমিসহ সহস্রাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি।
গ্রমাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে ঘুরেও কোনো ফল হয়নি। রাস্তাটির বেশ কয়েকটি অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচলে সম্পূর্ণ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বেংহাড়ি বনগ্রাম ইউনিয়নের সোনাচান্দি, সরকারপাড়া, বন্দরমনি, নিচার ঘাট, আরাজি শিকারপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের চলাচলের একমাত্র মেঠোপথটির (ফুলতলা-শালশিরী-মানিকপীড় গড়ের ডাঙ্গা সড়ক) বিভিন্ন স্থান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গ্রামবাসী। হেঁটে চলাচল করা গেলেও উপজেলা শহরে মালপত্র পরিবহনের কোনো উপায় নেই তাদের। ভাঙন শুরু হয়েছে আরাজি শিকারপুর সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে। চলে এসেছে বিদ্যালয়ের মাঠ পর্যন্ত। এ ছাড়াও, স্কুলের পূর্বদিকে বন্দরমনি পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার জায়গাজুড়ে চলছে করতোয়ার তাণ্ডব।
এতে ফসলি জমি, কবরস্থানসহ বেশ কয়েকটি তেজপাতা ও আমের বাগানের অংশ বিশেষ ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চূড়ান্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব গ্রামের বিদ্যালয়, দুটি মসজিদ, কবরস্থান, ফসলি জমি, বাগানসহ সহস্রাধিক ঘরবাড়ি।
স্থানীয় সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের অসুস্থ মানুষকে পায়ে হেঁটে নেওয়া কিংবা সনাতন পদ্ধতিতে বহন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
একই এলাকার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রির ক্ষেত্রেও তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। করতোয়ার ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীনের শঙ্কায় এখন দিন কাটছে স্থানীয়দের। ভাঙন তীব্র হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো নজরদারি নেই সেখানে।’
গত অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ওই স্থানের ভাঙন ঠেকাতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু, জিওব্যাগ দিয়ে কোনোমতে দায়সারাভাবে কাজ শেষ করায় ভাঙন ঠেকাতে তা কোনো কাজে আসেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বন্দরমনি এলাকার বৃদ্ধ আসর আলী জানান, প্রতিবছরই নদী ভেঙে গ্রামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের স্থায়ীভাবে বাঁধ দেওয়ার আশ্বাস বাস্তব রূপ নেয় না। বাঁধ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ঘরবাড়ি, মসজিদ ও বিদ্যালয়, সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
আরাজী শিকারপুর এলাকার রতন আলী জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন অফিসে ঘুরেও ফল পাওয়া যায়নি।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করতোয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ওই স্থানগুলো চিহ্নিত করে বাঁধের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে ভাঙনপ্রবণ জায়গাগুলোতে বাঁধ নির্মাণ করা হবে।’
Comments