আদালতের নির্দেশের পরও সাংবাদিক কাজলের চিকিৎসা অনিশ্চিত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কারাগারের বাইরে তার চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কারাগার কর্তৃপক্ষ।
অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলায় হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে। ফাইল ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কারাগারের বাইরে তার চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কারাগার কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিক কাজলের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের ভেতরে হাসপাতাল রয়েছে এবং সেখানে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

কারাগারের বাইরে কাজলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবস্থা তো বুঝতে পারছেন। করোনার কারণে এখন তাকে বাইরের কোনো হাসপাতালে ভর্তি করানোর সুযোগ নেই। যদি তার জটিল কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় এবং যদি এখানকার চিকিৎসক মনে করেন তাকে বাইরের হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার, তাহলেই এ বিষয়ে আমরা চিন্তা করব।’

কাজলের বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। চিকিৎসক এ বিষয়ে বলতে পারবেন।’

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই জন চিকিৎসক রয়েছেন। সেখানকার প্রধান চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান শুভর কাছে কাজলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বর্তমানে আমি নিজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং ছুটিতে রয়েছি। সাংবাদিক কাজলের কোনো আপডেট আমি জানি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কারারক্ষী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ১৫-২০ জন কারাবন্দিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হতো। কিন্তু, গতকাল কেবল দুই জন কারাবন্দিকে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শুধু যেসব কারাবন্দির গুরুতর শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদেরকেই চিকিৎসার জন্য বাইরের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।’

সাংবাদিক কাজলের ছেলে মনোরম পলক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সর্বশেষ বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। বাবা জানিয়েছেন যে, তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। বাম হাত প্যারালাইজড হয়ে আছে। বাম হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারছেন না। ঘনঘন বমি হচ্ছে। বমির সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে।’

কাজলের শারীরিক অবস্থা জানার পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং তার চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আদালত কাজলের সঠিক চিকিৎসার যথার্থ ব্যবস্থা নিতে কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

‘কিন্তু, আদালতের নির্দেশের পরেও আমার বাবাকে কারাগারেই রাখা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে না’, যোগ করেন মনোরম পলক।

মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ

সাংবাদিক কাজলের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দেওয়া বিবৃতিতে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলেছে, সাংবাদিক কাজলকে যথাযথ চিকিৎসা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে, কর্তৃপক্ষ এখনও কাজলের উন্নত চিকিৎসার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনার এই সংকটকালীন প্রায় তিন মাস যাবৎ বিতর্কিত আইনের অধীনে করা মামলায় কাজলকে কারাগারে রাখা হয়েছে। গণমাধ্যমে কারাগারের জেলারের দেওয়া মন্তব্য থেকে এটিই প্রমাণ হয় যে, কাজলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া সত্ত্বেও তা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

দ্রুত কাজলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ও তাকে মুক্তি দেওয়ায় আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।

উল্লেখ্য, ৫৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ৩ মে বেনাপোল থেকে সাংবাদিক কাজলকে উদ্ধার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরপর ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলায় তার জামিনের আদেশ দেন যশোর আদালত। তবে, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও তিনটি মামলা আছে বলে আদালতকে জানায় পুলিশ। এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় ক্রিমিনাল প্রসিডিউর আইনের ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরবর্তীতে আদালত তাকে যশোর কারাগারে পাঠায়। এরপর সেখান থেকে তাকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন:

সাংবাদিক কাজলের শারীরিক অবস্থার অবনতির অভিযোগ

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago