পৃথিবী করোনামুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় অভিবাসী বাংলাদেশিরা

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে তৈরি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে গত এপ্রিল থেকে ২৬টি দেশে কর্মরত অন্তত ৭৮ হাজার ৪৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন।
প্রতীকি ছবি। ছবি: আনিসুর রহমান

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে তৈরি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে গত এপ্রিল থেকে ২৬টি দেশে কর্মরত অন্তত ৭৮ হাজার ৪৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন।

তাদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ইরাকসহ নয়টি দেশ থেকে ৪৪ হাজার ৬৯৫ জন ফিরে এসেছেন চাকরি হারিয়ে কিংবা নতুন চাকরি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকায়।

গতকাল রোববার গণমাধ্যমের কাছে এসব প্রকাশ করার সময় মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ফিরে আসা শ্রমিকদের মধ্যে অনেককেই তাদের নিয়োগকর্তারা বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তাদের নিয়োগ দেবেন।

দেশে ফিরে আসা অভিবাসীদের সংখ্যাটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে সংগৃহীত। ১ এপ্রিল থেকে ২২ আগস্টের মধ্যে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের তথ্যের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন চার হাজার ৭৩২ জন।

ফিরে আসা শ্রমিকদের মধ্যে সর্বাধিক ২৫ হাজার ৬৫৩ জন এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩৮৯ জন সৌদি আরব থেকে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে আসা বেশিরভাগ প্রবাসী বলেছেন যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে তাদের নিয়োগকারীরা আবার তাদের নিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর বাকিরা বলেছেন, তারা ছুটিতে এসেছেন।

সৌদি আরব থেকে যারা ফিরে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন অপরাধে জেল খেটে ‘আউট-পাস’ নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও সাত হাজার ৩২৯ জন অভিবাসী শ্রমিক ফিরেছেন কুয়েত থেকে। তাদের বেশিরভাগকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে নিয়মিত কর্মসূচির আওতায় ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায়।

কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জর্ডান, জাপান, মরিশাসসহ সাতটি দেশ থেকে ফিরে এসেছেন দুই হাজার ৭৫৪ জন শ্রমিক।

বাকি তিন হাজার ৯৫ জন শ্রমিকের ফিরে আসার কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছেন দেশে প্রত্যাবাসীদের চাকরির সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য।

মন্ত্রী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের পরিবর্তিত চাহিদাকে কেন্দ্র করে অভিবাসী কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের স্বল্পোন্নত এলাকা থেকে আরও বেশি শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর জন্য কাজ করছে সরকার।

সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬০টি দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন।

তাদের বেশিরভাগই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, জর্ডান ও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে স্বল্প বেতনের শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে অভিবাসী শ্রমিকরা ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

তাদের এই অবদানকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক চাপে পড়ায় হাজার হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী চাকরি হারিয়েছেন।

তাদের জন্য ১১ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক খাদ্য ও চিকিত্সা সহায়তা বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে বিতরণ করেছে সরকার।

এছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশে ফিরে আসা এবং বিদেশে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে ২০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গত মাস থেকেই এই ঋণ বিতরণ করা শুরু করেছে।

মহামারিতে চাকরি হারানো প্রবাসীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার পৃথক ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার।

Comments

The Daily Star  | English

After OCs, EC orders to transfer UNOs

In the first phase, it asked to transfer all UNOs who have been working in their respective upazilas for more than a year

2h ago