গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
Humanchain.jpg
রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বারসিক, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন ও ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের মে মাসের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার চলাচলকারী প্রতি কিলোমিটারের সর্বোচ্চ ভাড়া ছিল ১ টাকা ৪২ পয়সা। করোনাকালে ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে তা ২ টাকা ২৭ পয়সা নির্ধারিত হয়েছে।

তারা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে বাস ও মিনিবাসের চলাচলের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে ভাড়া ১টাকা ৭০ পয়সা এবং চট্টগ্রামে ১ টাকা ৬০ পয়সা। করোনাকালে বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ায় এবং তা যথাক্রমে ২ টাকা ৭২ পয়সা এবং ২ টাকা ৫৬ পয়সা হয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর সময় ভোক্তা ও নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো আপত্তি করেছিল। করোনাকালে পৃথিবীর কোথাও গণপরিবহনে যাত্রীভাড়া বাড়ানো হয়নি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চাইতেও বাস্তবে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, গণপরিবহন করোনাকালে ৬৬ দিন বন্ধের পর চালু হওয়াতে আবারও দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য। ভাড়া ডাবল, উপেক্ষিত যাত্রী সুরক্ষা, ১১ দফা শর্ত ভঙ্গ করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলছে বাসচালক, হেলপার ও যাত্রী। করোনাকালে মানুষের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে নিত্যযাত্রীরা। প্রতিবাদ করেও সুফল মিলছে না। অন্যদিকে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহনের কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

তারা বলেন, বিগত দিনগুলোতে দেখা গেছে একটি সিন্ডিকেট পুরো পরিবহন সেক্টরকে দখল করে নিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি যত সংখ্যক ও যে মানের বাস চালানোর শর্তে রুট পারমিট পায়, তারা তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক এবং নিম্নমানের বাস চালায়। কোম্পানিগুলো যেখানে ৫০টি বাস চালানোর কথা সেখানে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ১০টি বাস চালাচ্ছে। এতে যাত্রীরা যথেষ্ট যানবাহন না পেয়ে রাস্তার মাঝখান থেকে চলন্ত বাসে ঝুঁকি নিয়ে ওঠানামা করতে বাধ্য হচ্ছে, এতে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া, ঢাকা মহানগরীতে গেটলক বা সিটিং বাসের নামে অনেক বাস চলাচল করে যা অন্য ভাড়ার চাইতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে।

বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বিআরটিএ বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামী ৩১ আগস্টের পর গণপরিবহনে আর বর্ধিত ভাড়া নেওয়া যাবে না। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আশাবাদী হতে পারছি না। বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ঢাকা শহরে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সার এবং দূরপাল্লার প্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ভাড়া ছিল ১ টাকা ৪২ পয়সা। এর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে না, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন যাত্রী চলাচল করতে পারে সেইদিকে নজর দিতে হবে।

তারা আরও বলেন, রাস্তার তুলনায় প্রাইভেট কার ও অন্যান্য গাড়িও অনেক বেশি। কিন্তু প্রয়োজন ভালো গণপরিবহন ব্যবস্থা, বিশেষ করে ভালো সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন পরিকল্পনামাফিক যাত্রীবান্ধব বড় বড় বাস। পর্যাপ্ত বাসের অভাবে এবং সড়ক পরিবহনে মাফিয়া চক্রের কারণে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। ফলে বিশেষ করে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ বাস্তবায়নে শিথিলতার কারণে বেপরোয়া গাড়ি চালানো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এবং দুর্ঘটনার নামে হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলছে। সাইকেলের ব্যবহার সম্প্রতি বৃদ্ধি পেলেও সাইকেলের জন্য আলাদা লেন বা প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এখনো নেই।

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser Muhammad Yunus

Chief Adviser Yunus's UNGA trip a critical turning point

Now is the best chance for Bangladesh to strengthen international cooperation.

8h ago