‘ধর্ষণ-হত্যার স্বীকারোক্তি’ দেওয়া নারায়ণগঞ্জের সেই ৩ জনের মুক্তি দাবি
ধর্ষণ ও হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আসার পর কিশোরীকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন জনের মুক্তি চেয়েছেন মামলাকারী কিশোরীর বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন।
নিখোঁজ হওয়ার ৫১ দিন পর মেয়েকে পাওয়ার পর তিনি বলেছেন, ‘আমার মেয়ে পাইছি। আর কোনো অভিযোগ নাই। ওরাও যেন মুক্তি পায়। ওরাও মায়ের সন্তান। ওরা যেন ওদের মায়ের কোলে ফিরে যায়।’
‘অপহরণ, গণধর্ষণ ও হত্যা’র স্বীকারোক্তি দিলেও মেয়ে ফিরে পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নতুন কোনো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে আজ দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমি চাই মিমাংসা হয়ে যাক। এখন প্রশাসন যা করে তা মানতে হবে। ওই তিন জনের বিরুদ্ধে আমার নতুন বা পুরাতন কোনো অভিযোগ নেই। আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান হোক এটাই চাই।’
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা প্রথমে অজ্ঞাত একটি ফোন নাম্বার নিয়ে জিডি করি। তারপর পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে রাকিব, আব্দুল্লাহ ও খলিলুরের নাম। তারা আদালতে কেন এ স্বীকারোক্তি দিয়েছে সেটা জানা নেই।’
বাড়িতে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়ার পর কিশোরীর পরিবার জানতে পারে সে জীবিত আছে। সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকায় ওই কিশোরীর সন্ধান পায় পুলিশ। তার স্বামী ইকবালকে আটক করা হয়। বিকেলে মেয়েটিকে তার বাবার জিম্মায় দেন আদালত। সেই সঙ্গে তার স্বামীকে কারাগারে পাঠানো হয়।
অভিযুক্ত তিন যুবকের আইনজীবী মো. রোকন উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ক অঞ্চল) মাহমুদুল মোহসীনের আদালতে তিন জনের জামিন আবেদন করা হয়। আদালত আগামী ২৭ আগস্ট আসামিদের উপস্থিতিতে জামিন শুনানির তারিখ ধার্য করেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে তিন জনের জামিন করা হবে। তারপর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করা হবে। পরবর্তীতে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাদীর বিরদ্ধে মামলা করা হবে। মূলত মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাজানো গল্পে তিনজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আর বাদী মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করেছেন।’
পুলিশের তদন্তে গাফিলতি ও নির্যাতনের ব্যাপারে তিন আসামির স্বজনদের অভিযোগ তদন্ত করতে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে আজকে থেকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্তে যদি তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাফিলতি ও অর্থ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ বছরের নাবালিকাকে বিয়ে করার অপরাধে নারী নির্যাতন আইনে স্বামী ইকবালের বিরুদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
হত্যার স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর কিশোরী জীবিত ফিরে আসায় পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে জায়েদুল আলম বলেন, ‘বিচারকের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন তাদেরকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে, তারা কেন এ স্বীকারোক্তি দিল। তাদের কাছ থেকে রহস্য উদঘাটন করে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। তখন আদালত আদেশ বা নির্দেশনা দিবেন। সেই মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত গত ৪ জুলাই নিখোঁজ হয় ওই কিশোরী। প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই সদর মডেল থানায় জিডি করেন কিশোরীর মা। পরে গত ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা। পরদিন ওই মামলায় বন্দরের খলিলনগর এলাকার মো. আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইজিবাইক চালক রাকিব (১৯) ও ইস্পাহানী খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি খলিলুর রহমানকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, ওই স্কুল ছাত্রীকে নৌকায় করে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন তারা।
বর্তমানে এই তিন জন কারাগারে আছেন।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানতে পারি ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়নি। ঘটনার দিন অভিযুক্ত আব্দুল্লাহার সঙ্গে ওই কিশোরী দেখা করে। পরে রাতে ইকবালের সঙ্গে পালিয়ে যায়। তারা বিয়ে করে বন্দর কুশিয়ারা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। গত ২৩ আগস্ট দুপুরে ওই কিশোরী তার মাকে ফোন দিয়ে টাকা চায়। পরে পুলিশ কুশিয়ারা থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে এবং স্বামী ইকবালকে আটক করে।’
এদিকে অভিযুক্ত তিন যুবকের পরিবারের অভিযোগ, মামলার তদন্তকর্মকর্তা এসআই মামুন রিমান্ডে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে তাদের তিন পরিবারের কাছ থেকে ৪৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। এরপরও রিমান্ডে নির্যাতন করে, ভয় দেখিয়ে তাদের মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেন।
আরও পড়ুন:
Comments