পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী মামুন হত্যা রহস্য এখনো উদঘাটিত হয়নি

সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা মিনারা বেগম। ক্ষণে ক্ষণে তার একটাই প্রশ্ন, ‘কেন মেরে ফেলল, কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের?’
Mamun.jpg
নিহত মামুন হাওলাদার। ছবি: সংগৃহীত

সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা মিনারা বেগম। ক্ষণে ক্ষণে তার একটাই প্রশ্ন, ‘কেন মেরে ফেলল, কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের?’

মুঠোফোনে কল করে ডেকে নিয়ে গত ১ জুলাই রাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বাড়ির অদূরে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয় মামুন হাওলাদারকে (৩৮)। তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের কমপক্ষে ১২টি আঘাত পাওয়া গেছে। ছেলের এরকম মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা মিনারা বেগম (৬৫)।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের মিঠাপুর গ্রামের বাড়িতে বসে মা মিনারা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের। কী কারণে, কারা তাকে মেরে ফেলল? আমি পুত্র হত্যার সঠিক বিচার দেখে যেতে চাই। সঠিক বিচার পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পাব।’

‘যারা আমার মানিককে হত্যা করেছে, তারা আমাদেরকেও হত্যা করতে চায়। আমাদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে’, বলেন তিনি।

এ বিষয়ে মিনারা বেগম গত ২২ জুলাই পটুয়াখালী থানায় সালাম গাজী নামে একজনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন। এখন পুরো পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানা গেছে।

মিনারার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে মামুন হাওলাদার (৩৮) সবার বড়। তিনি মিঠাপুর গ্রামের মৃত সোহরাব হাওলাদারের পুত্র। ১২ বছর মালয়েশিয়ায় চাকরি করে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে আসেন মামুন। বাড়ি ফেরার দুই মাসের মধ্যেই তার বাবার মৃত্যু হয়। ফলে আর মালয়েশিয়া যাওয়া হয়নি তার। পরে শহরের নিউ মার্কেটে পাদুকার ব্যবসা শুরু করে।

‘নাজ সুজ’ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখেন মামুন। শান্ত ও পরোপকারী হিসেবে এলাকায় সুপরিচিতি রয়েছে তার। করোনার কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকটা অলস সময় কাটছিল মামুনের।

মিনারা বেগম জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকে মোবাইলে একটি কল আসলে কথা বলতে বলতে ঘরের বাইরে চলে যায় মামুন। পরে রাত ১১টার দিকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মামুনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে গ্রামের একটি কাঁচা রাস্তার পাশে বাড়ির অদূরে মামুনের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

মিনারা বেগম বাদী হয়ে ওই দিন ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’র বিরুদ্ধে পটুয়াখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ পর্যন্ত তিন জনকে সন্দেহজনকভাবে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠালেও হত্যার মূল রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি। মামুন হত্যার পর তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শারমিন আক্তার বাবার বাড়িতে চলে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মামুন শান্ত ও পরোপকারী স্বভাবের। তার এমন মৃত্যুতে গ্রামের লোকজন হতবাক। আমরা এ খুনের সঠিক বিচার চাই।’

দুই বোনের বিয়ে দিয়েছে মামুন। ছোট ভাই সুমন পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। বড় ভাইয়ের অবর্তমানে সুমনই এখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করছেন। তবে একা বাড়ি থেকে বের হতে ভয় হয় তার। বর্তমানে গ্রামের অন্যান্য লোকজনদের সঙ্গে বাড়ি থেকে শহরের নিউ মার্কেটে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছেন।

পটুয়াখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার মোর্শেদ বলেন, ‘পূর্ব শক্রতার জেরে সুকৌশলে পরিচিত কোনো প্রতিপক্ষ তাকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা মামুন হত্যার রহস্য উদঘাটনে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও আমাদের হাতে এসেছে। আশা করছি শিগগিরই আমরা সফল হব।’

‘মামুনের পরিবারের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি’, বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English

Students besiege HC demanding resignation of 'pro-AL fascist judges'

A group of students marched to the High Court premises to besiege the court, demanding the resignation of "pro-Awami League fascist judges"

1h ago